এম মেহেদী সানি , হাবড়া, আপনজন: রেশন দুর্নীতি মামলায় জামিন পাওয়ার পর দীর্ঘ ১৫ মাস পর রবিবার ছুটির দিন প্রথম নিজের বিধানসভা এলাকায় এলেন রাজ্যের পোড় খাওয়া নেতৃত্ব প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । হাবড়ায় জ্যোতিপ্রিয়’র আগমন ঘিরে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো ৷ সাজো সাজো রব ছিল গোটা হাবড়া চত্বরে ৷
রবিবার হাজারও কর্মী, সমর্থকের ভিড়ে মিছিলে পা মেলালেও রাজনৈতিক কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি । শুধুমাত্র বললেন হাবড়ার উন্নয়নের কথায় । ইতিমধ্যেই জামিন পাওয়ার পরই জ্যোতিপ্রিয়কে রাজ্যের বিধানসভায় তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত তিনি রাজনীতিতেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠবেন বলেও মনে করছেন তৃণমূল নেতা কর্মীরা।
এ দিন এলাকার বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে সকাল নটার আগে থেকেই হাবড়া ২নম্বর রেলগেট সংলগ্ন যশোর রোডে জমায়েত শুরু হয়েছিল নেতা-কর্মী থেকে সাধারণ মানুষের । সাড়ে দশটা নাগাদ আসেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ককে কাছে পেয়ে কর্মী সমর্থকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল রেশন দুর্নীতি মামলা জ্যোতিপ্রিয়র জনপ্রিয়তা কেড়ে নিতে পারেনি ৷ এরপর প্রায় ১ কিলোমিটার মিছিলে হেঁটে হাবড়া পুরসভায় পৌঁছান বিধায়ক। হাবড়া পুরসভায় বসেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, “হাবড়ার উন্নয়ই এখন আমার কাছে পাখির চোখ। আমরা মিছিল-মিটিং সব করব, কিন্তু সবার আগে উন্নয়ন করতে হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এলাকায় যে উন্নয়ন আমরা শুরু করেছিলাম, সেগুলির কিছু এখনও অসমাপ্ত । সেই কাজ শেষ করা হবে । বিধায়ক তহবিলের বেশিরভাগ টাকা এলাকার স্কুল, কলেজ ও হাবড়া হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা হবে । বাওগাছীতে প্রসূতি মায়েদের জন্য অত্যাধুনিক পরিকাঠামো চিকিৎসালয় তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে ।”
জানা গিয়েছে, পুরসভায় কাউন্সিলরদের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও করেন তিনি ৷ পুরসভা থেকে বেরিয়ে কলতান প্রেক্ষাগৃহ পরিদর্শনের পর ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সহ মছলন্দপুর ও কুমড়া পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় কর্মীদের পিকনিকেও যান । তবে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন জ্যোতিপ্রিয় ৷ আগের তুলনায় অনেক সংযমী দেখিয়েছে বিধায়ককে । দিনভর বিধায়কের সাথে থাকতে দেখা যায় হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা, হাবড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেহাল আলী, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অজিত সাহা সহ হাবড়া বিধানসভা এলাকার একাধিক তৃণমূল নেতৃত্ব ও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ৷
জ্যোতিপ্রিয়কে রেশন দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তিনি প্রায় ১৪ মাস জেল হেফাজতে ছিলেন। ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি বিশেষ ইডি আদালত ৫০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড এবং ২৫ হাজার টাকার দু’টি জামিন বন্ডে শর্তসাপেক্ষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। সেই দিন সন্ধ্যায় তিনি আলিপুরের প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পান এবং সল্টলেকের বাসভবনে ফিরে আসেন। গ্রেফতারের প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর, ২০২৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, রাজ্যপাল সংবিধানের ১৬৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জ্যোতিপ্রিয়কে বন দফতর এবং শিল্পোদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন দফতরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় । এখনও হাবড়ার বিধায়ক পদে রয়েছেন তিনি। এবার বিধায়ক হিসেবেই এলাকার উন্নয়নে জোর দিতে চাইছেন তিনি ৷
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct