আপনজন ডেস্ক: সুদানের সামরিক বাহিনী শনিবার জানিয়েছে, তারা প্রায় পুরো খার্তুম নর্থ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। রাজধানীকে সম্পূর্ণ দখলে নিতে তারা আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করেছে।
সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, তারা খার্তুম নর্থের গুরুত্বপূর্ণ জেলা কাফুরি পুনর্দখল করেছে এবং আরএসএফ সদস্যদের বাহরির (খার্তুম নর্থ) শহরতলিতে সরিয়ে দিয়েছে। খার্তুমের অন্যতম সমৃদ্ধ এই জেলা দীর্ঘদিন ধরে আরএসএফের ঘাঁটি ছিল।
এখানে বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে আরএসএফ কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দাগলোর ভাই ও উপপ্রধান আবদেল রহিম দাগলোর সম্পদও অন্তর্ভুক্ত।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাবিল আবদুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, শুক্রবার সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা ‘দাগলো সন্ত্রাসী মিলিশিয়ার অবশিষ্ট অংশ’কে কাফুরি থেকে বিতাড়িত করেছে। এ ছাড়া পূর্ব দিকে ১৫ কিলোমিটার দূরের শারক এল নিলের অন্যান্য এলাকার দখলও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে সামরিক সূত্র বৃহস্পতিবার জানিয়েছিল, সেনাবাহিনী খার্তুমের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিল, সেখানে সংঘর্ষ চলছে এবং রাজধানীর দক্ষিণে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আরএসএফের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাজধানী ও তার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো পুনর্দখল করেছে। এই অগ্রগতি সেনাবাহিনীর অন্যতম বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ যুদ্ধ শুরুর পর আরএসএফ খার্তুমসহ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা দখল করেছিল।
প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা
যদিও সেনাবাহিনী রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তবে সেনাবাহিনীর দখলে আসা নতুন এলাকায় প্রতিশোধমূলক হামলা হতে পারে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুক্রবার সতর্ক করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, সেখানে অ্যাক্টিভিস্ট, মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও ত্রাণকর্মীদের ‘আরএসএফের সহযোগী’ বলে অভিযুক্ত করে টার্গেট করার একটি তালিকা প্রচারিত হচ্ছে। খার্তুমের সাউথ বেল্ট এলাকায় শনিবার আরএসএফ সদস্যরা একটি স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী দলের দুই সদস্যকে বন্দুকের মুখে বসাইর হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এটি ছিল ওই অঞ্চলের আংশিকভাবে সচল শেষ হাসপাতাল। এর আগে আরএসএফ বৃহস্পতিবার একই হাসপাতালে ব্যবস্থাপক, একটি স্যুপ কিচেনের প্রধান এবং এক স্বেচ্ছাসেবককে আটক করেছিল বলে স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানিয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, জানুয়ারির শেষ দিকে বাহরি এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর অন্তত ১৮ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। গত মাসে আলজাজিরা রাজ্যের রাজধানী ওয়াদ মাদানি দখলের পর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে। সন্দেহভাজন আরএসএফ সমর্থিত জনগোষ্ঠীগুলোকে বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
অন্যদিকে আরএসএফের বিরুদ্ধে জাতিগত সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে, যা গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতেও জাতিগত কারণে বেসামরিকদের টার্গেট করার অভিযোগ উঠছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct