সারিউল ইসলাম , মুর্শিদাবাদ, আপনজন: সংস্কার হবে ফুটি মসজিদ। মুর্শিদাবাদ পুরসভার তত্ত্বাবধানে ৩০০ বছরের পুরনো অসমাপ্ত কাজের এই মসজিদটি সংস্কার করা হবে। মসজিদের পাশে নির্মাণ করা হবে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং চিলড্রেন পার্ক। মসজিদের পাশ ধরে তৈরি হবে নতুন রাস্তা।
মুর্শিদাবাদ নামটির প্রসঙ্গ উঠলে মনে পড়ে যায় বাংলার নবাবী আমলের কথা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মৌর্য, সুলতানি, কুষাণ, পাল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বিদ্যমান থাকলেও মুর্শিদাবাদ বলতে মানুষ বোঝে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদের শহরের প্রচলিত নবাবী ইতিহাসকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাংলার দেওয়ান মুর্শিদকুলী খাঁ ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তর করেন মকসুদাবাদ। পরবর্তী সময়ে মুর্শিদকুলী খাঁ এর জামাতা তথা দ্বিতীয় নবাব সুজাউদ্দিন খাঁ মুর্শিদকুলীর নাম অনুসারে মকসুদাবাদের নামকরণ করেন মুর্শিদাবাদ। কখনো নাসিরি বংশের শাসনকাল, কখনো আফসারী বংশ আবার কখনো নাজাফি বংশের শাসনকাল। যুগে যুগে বদল হয়েছে মুর্শিদাবাদের নবাবি মসনদের মালিকানা। কিন্তু নবাবদের স্মৃতি বিজড়িত বহু নিদর্শন রয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের মাটিতে। তেমনই এক নিদর্শন ফৌতি মসজিদ বা ফুটি মসজিদ। কাটরা মসজিদ থেকে ৪০০ মিটার পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই ফুটি মাসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন নাসিরি বংশের শেষ নবাব তথা মুর্শিদকুলি খাঁ এর দৌহিত্র সরফরাজ খাঁ। তবে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও তা সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই সরফরাজ খাঁ কে গিরিয়ার যুদ্ধে প্রাণ হারাতে হয়। ১৯৩৯ সালে এই মসজিদটির কাজ সম্পূর্ণ না হতেই নবাবী মসনদে বদল ঘটেছিল। গম্বুজের কাজ অসম্পূর্ণ থাকার কারণে লোকমুখে এই মসজিদের নামকরণ হয় ফুটি মসজিদ।
সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে যেতে বসেছিল এই মসজিদটি।
অন্যদিকে পুরসভার বেদখল জমি শনিবার পুনরুদ্ধার করল মুর্শিদাবাদ পুরসভা। এ প্রসঙ্গে পুরসভার সম্পদ বিষয়ক আধিকারিক প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “মসজিদের জমি সহ পার্শ্ববর্তী মোট সাড়ে আট বিঘা বেদখল হওয়া জমি শুক্রবার এবং শনিবার পুনরুদ্ধার করে পুরসভা নিজের দখলে নিয়েছে। আগামীতে এখানে উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।”
মুর্শিদাবাদ পুরসভার তত্ত্বাবধানে ফুটি মসজিদ সংস্কার করা হবে বলে জানান পুরপ্রধান ইন্দ্রজিৎ ধর। তিনি বলেন, “দু’দিনে পুরসভার দখলকৃত সাড়ে আট বিঘা জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে দেড় বিঘা জমির উপর রয়েছে ফুটি মসজিদ। এই মসজিদটি সংস্কার করা হবে। মসজিদের পাশে তৈরি করা হবে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেখানে তৈরি হবে একটি চিলড্রেন পার্ক। কাঠগোলা থেকে ফুটি মসজিদ হয়ে কাটরা মসজিদ যাওয়ার জন্য তৈরি হবে নতুন রাস্তা। যেহেতু পুরসভার নিজস্ব জমিতে মসজিদটি রয়েছে, তাই তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভার। ইতিহাস বাঁচাতে আমরা সদা তৎপর। তবে এখানে পুরাতত্ত্ব বিভাগের কোন ভূমিকা আছে কি না তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, এর আগেও নবাবী আমলের ঘন্টাঘর সংস্কার করে সেখানে ঘন্টা বাজিয়েছে পুরসভা। এখন নিয়মিত সকাল ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ঘন্টা বাজে দক্ষিণ দরজার ঘন্টাঘরে। পাশাপাশি চকে অবস্থিত নবাব সুজাউদ্দিন খাঁ নির্মিত বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার প্রবেশদ্বার বা তোরণ সংস্কারের কাজ চলছে। এবারে সুজাউদ্দিন পুত্র সরফরাজ খাঁ নির্মিত ফুটি মসজিদ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে মুর্শিদাবাদ পুরসভা।
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরকে জানাচ্ছিলাম ফুটি মসজিদ সংস্কার না করা হলে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। যেহেতু এটি একটি পুরনো নিদর্শন, তাই এটির সংস্কার খুব প্রয়োজন ছিল। পুরসভা সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে জেনে খুশি হয়েছি।”
পুরসভার উদ্যোগে সংস্কার হতে চলেছে তিনশো বছরের পুরনো এই মসজিদটি। এর ফলে পর্যটকদের ফুটি মসজিদের প্রতি আগ্রহ বাড়বে বলে আশাবাদী জেলার পর্যটন মহল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct