আপনজন ডেস্ক: বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের (বিজিবিএস) প্রথম দিন বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল লগ্নির ঘোষণা দিলেন বিভিন্ন শিল্পোদ্যোগীরা। শুধু তাই নয় পশ্চিমবঙ্গে যে শিল্পের সুপরিবেশ আছে, আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সবসময় তাদের নানা সমস্যা নিরসনে দ্রুত এগিয়ে আসেন সেকথাও শিল্পপতিরা বলতে দ্বিধাবোধ করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে কেন পশ্চিমবঙ্গে কেন তিনি লগ্নি করতে চান সে প্রসঙ্গে আম্বানি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজ বাংলা মানেই আকাশছোঁয়া দৃষ্টি।আজ বাংলা মানেই প্রবল উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আজ বাংলা মানেই দক্ষ বাস্তবায়ন। এককথায় মমতা দিদির নেতৃত্বে বাংলা মানেই ব্যবসা। আর মমতা দিদি সব সময় মন থেকে ব্যবসা-ব্যবসা মানেন।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আম্বানি বলেন, দিদি, আপনি যেভাবে নারী শক্তির স্বশক্তিকরণ করছেন, তা সারা দেশের কাছে উদাহরণস্বরূপ। আপনার নাম, মমতা, সহানুভূতি বা করুণার প্রতীক। কিন্তু আপনার নামের ‘দিদি’ মানে একজন অক্লান্ত নেতার প্রতীক। আপনি সহানুভূতি এবং শক্তির ব্যক্তিত্ব। মমতা সপ্তাহে যে ৬৪ হাজার কদম হাঁটেন, সেকথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন আম্বানি। মমতার কবিতার কথা উল্লেখ করে আম্বানি বলেন, আপনার নিজের একটা কবিতায় একটা সুন্দর বাংলা বাক্য আছে, মায়ের মুখ স্বর্গ সুখ’। এটি বাংলা এবং তার বাইরেও সাংস্কৃতিক অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে, যেখানে মায়ের ভালবাসাকে পবিত্র এবং ঐশ্বরিক বলে মনে করা হয়।
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নিয়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি বুধবার ঘোষণা করেন, এই দশকের শেষে পশ্চিমবঙ্গে ৫০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। পরিকল্পনা ঘোষণার সময় মুকেশ আম্বানি বলেন, ২০১৬ সালে সংস্থার বিনিয়োগ ছিল ২০০০ কোটি টাকারও কম। তার পর থেকে তারা ৫০,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছেন। আগামি দশ বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগ দ্বিগুণ করা হবে। আর আমাদের বিনিয়োগ ১ লক্ষেরও বেশি প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে। আজ আমি পাঁচটি সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে চাই। তিনি বলেন, জিও এআই ডেটা সেন্টার তৈরি করছে। আমরা কলকাতায় আমাদের ডেটা সেন্টারকে এআই ডেটা সেন্টারে রূপান্তরিত করেছি এবং নয় মাসের মধ্যে এটি চালু হবে। উন্নত উৎপাদন ক্ষমতা সহ একটি গভীর প্রযুক্তি জাতি হিসাবে ভারতের রূপান্তরের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অপরিহার্য। জিও বর্তমানে ভারতে বিশ্বের সেরা পরিকাঠামো তৈরি করছে। আজ জিও শুধু এক নম্বর ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা নয়, এটি বিশ্বের এক নম্বর ডেটা সংস্থা। রিলায়েন্স রিটেলে যে এ রাজ্যে ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে সেকথা জানান আম্বানি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমার ফেভারিট মুকেশ জি তো সব কিছুই বলে দিয়েছেন। কোনো কিছু বাদ রাখেন নি। উনি আজকে ঘোষণা করলেন যে আগামি দিনে তাঁর ‘জিও’র নতুন প্রজেক্ট এই কলকাতা থেকেই বিশ্বের বাজারে ছড়িয়ে পড়বে। আমি খুব খুব খুশি। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে বাংলা হল দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে একটা সময় তো বাংলা দেশের রাজধানী ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাকে ভুলে যাবেন না, বাংলাও আপনাদের ভুলবে না। বাংলা হল পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে।
স্কিল, এমএসএমই, মহিলা স্বশক্তিকরণ এ আমরা দেশের এক নম্বরে। আগে আমাদের এখানে ঘেরাও হতো, স্ট্রাইক হতো। এখন আর এটা হয় না। একদিনের জন্যও কোনো শ্রমদিবস নষ্ট হয় না। মমতা বলেন, আজকেও আমি শুনছিলাম কেউ কেউ বলছে নাকি ১৩ টাকাও বিনিয়োগ হয়নি। আমি আপনাদের যারা শুধুই রাজনীতি করেন তাদের কে কোনো উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আমি করি না। আমি শুধু সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, আমি যা উত্তর দেওয়ার তাদেরকেই দেবো, আপনাদের নয়। ১২ লক্ষ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ হয়েছে। জিএসডিপিবেড়েছে ৩.৯৩ গুণ। ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৮৫ গুণ।
মহিলা স্বশক্তিকরণে আমরা শুধু কথায় বিশ্বাস করি না, আমরা করে দেখাই। সংসদে আমাদের মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৯.৫ শতাংশ, যা সারা দেশের আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। আমাদের পর্যটন ক্ষেত্র নিয়ে আলাদা করে আর কিছু বলতে চাই না। আমরা বিভেদ করি না, আমরা সবাইকে এক করি।
শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলেন, আমি এই শহরেই জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সব বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তিনি তৎক্ষণাৎ সেই সমস্যার সমাধান করেন। আমরা এই রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আরো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আমরা এখানে বিনিয়োগ করবো। মূলতঃ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও এনার্জি সেক্টরে এই বিনিয়োগ করব।
আইটিসির সঞ্জীব পুরি বলেন, ৫০ এর বেশি সিইও এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আমরা (আইটিসি) এই রাজ্যে অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছি। প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে আমাদের এই রাজ্যে। আমরা এখানে গ্লোবাল সেক্টর ফর ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম মেধার হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে আমাদের বিনিয়োগের এই ধারা আগামি দিনেও বজায় থাকবে। এই মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এআই হাবের শিলান্যাস করেছেন।
সজ্জন জিন্দাল (জেএসডব্লু) বলেন, ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শালবনিতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যান্য শিল্পপতিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, উমেশ চৌধুরী, অশোক ধানুকা প্রমুখ। ছিলেন ফিকির চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন আগরওয়ালও।
এছাড়াও ছিলেন ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি। হেমন্ত সোরেন বলেন, ঝাড়খন্ড ঝাড়খন্ড ও বাংলার মধ্যে এমন অনেক কিছুই আছে যা এক। খনিজ সম্পদ ও টেক্সটাইল শিল্পে ঝাড়খন্ড অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। আমি দেশ ও বিদেশী শিল্পপতিদের কাছে আবেদন করছি আপনারা আমাদের রাজ্যে আসুন। সৌরভ গাঙ্গুলি আবদেন জানান, শুধু ক্রিকেট নয়, বাংলা ফুটবলেরও ভক্ত। ফলে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct