আপনজন ডেস্ক: ‘আপনারা কোনও শুভ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছেন ?’ মঙ্গলবার ঠিক এভাবেই সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভৎর্সনার মুখে পড়ল অসম সরকার ৷ বিদেশি ঘোষিত ব্যক্তিদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক কেন্দ্রে রাখার এবং তাদের মুক্তি না-দেওয়ার জন্য হিমন্ত-সরকারকে তুলোধনা করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সংবাদ সংস্থা পিটিআিই সূত্র জানিয়েছে, বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, অসম সরকার তথ্য গোপন করছে ৷ শুনানিতে বেঞ্চ জানিয়েছে, একবার আটক ব্যক্তিদের বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হলে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত । অসম সরকারকে বেঞ্চ বলে, ‘আপনারা মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছেন কারণ তাদের ঠিকানা জানা নেই । কেন এটি আমাদের উদ্বেগের বিষয় হবে ? আপনি কি কোনও মুহূর্তের (শুভ সময়ের) জন্য অপেক্ষা করছেন ?’’
উত্তরে অসম সরকার জানায়, আটক বিদেশিদের ঠিকানা অজানা থাকায় তারা জাতীয়তা যাচাই ফর্ম বিদেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে না । পালটা সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘একবার কোনও ব্যক্তিকে বিদেশি ঘোষণা করলে, আপনাকে পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে । আপনি তাদের অনন্তকাল ধরে আটকে রাখতে পারবেন না । সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে আছে। অসমে অনেক বিদেশি আটক কেন্দ্র রয়েছে। আপনি কতজনকে ছেড়েছেন ?’
এদিনের শুনানিতে শীর্ষ আদালত অসম সরকারকে ৬৩ জন ঘোষিত বিদেশি নাগরিককে (যাদের পরিচয় জানা) মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে দু’সপ্তাহের মধ্যে একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশনামায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘‘আমরা রাজ্যকে এই আদেশে সম্মতি জানিয়ে একটি যথাযথ হলফনামা দাখিল করার নির্দেশ দিচ্ছি । যদি রাজ্য সরকার দেখতে পায় যে জাতীয়তা যাচাইকরণ ফর্ম দু’মাস আগে পাঠানো হয়েছে, তাহলে রাজ্য অবিলম্বে বিদেশ মন্ত্রককে একটি স্মারক জারি করবে । মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই স্মারক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তা যাচাইকরণের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় কর্তৃক কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷’’
শুনানিতে অসমের মুখ্য সচিব ডঃ রবি কোটাকে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ বেঞ্চ মুখ্যসচিবকে বলে, ‘‘ঠিকানা ছাড়াই আপনি তাদের মুক্তি দিতে পারেন । আপনি তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না ৷ আপনি তাদের দেশের রাজধানীতে নির্বাসন দেন । ধরুন ব্যক্তিটি পাকিস্তানের, আপনি পাকিস্তানের রাজধানী শহর জানেন ? আপনি কীভাবে তাদের এখানে আটকে রাখতে পারেন এই বলে যে তাদের নির্দিষ্ট ঠিকানা-পরিচয় জানা নেই ?’’
শুধু তাই নয়, বিদেশিদের আটক রেখে দেশের কোষাগার থেকে প্রচুর খরচ হচ্ছে ৷ তা নিয়ে সরকার কেন কিছু ভাবছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷
বেঞ্চকে অসম সরকারের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস বলেন, ‘বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে । ভারত বলেছে তারা ভারতীয় নয়। বাংলাদেশ বলেছে তারা বাংলাদেশি নয় । ফলে তারা কার্যত রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছে । আটক কেন্দ্রে তারা ১০বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রয়েছে । বাংলাদেশ বলেছে যে তারা বহু বছর ধরে ভারতে বসবাসকারী কাউকে গ্রহণ করবে না ৷’’
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct