এম মেহেদী সানি, সাঁতরাগাছি, আপনজন: আল-আমীন মিশনে কেন্দ্রীয়ভাবে মূল ক্যাম্পাসে ‘আল-আমীন উৎসব’ আয়োজিত হলেও প্রত্যেকটি শাখা আলাদা আলাদা ভাবে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা এবং প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন উৎসবের আয়োজন করে। রবিবার হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে অবস্থিত আল-আমীন মিশনের অন্যতম শাখা ‘আল-আমীন মিশন একাডেমি নয়াবাজ’-এ অনুষ্ঠিত হলো কৃতি সংবর্ধনা এবং প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন উৎসব। এই শাখার সুপারিনটেন্ডেন্ট খন্দকার মহিউল হকের তত্ত্বাবধানে মিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলামের উপস্থিতিতে প্রাক্তনী এবং বর্তমানদের মেলবন্ধনে উৎসবের আমেজ ছিল ক্যাম্পাস জুড়ে। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপর দফায় দফায় মিশনের কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করেন উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠান থেকে নয়াবাজ ক্যাম্পাসের ২০২৪ শিক্ষা বর্ষের মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের কৃতীদের পাশাপাশি ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়া সকল শিক্ষার্থীদের সংবর্ধিত করা হয়। স্বপ্নকে জয় করা হবু ডাক্তাররা আনন্দের এক গাল হাসি নিয়ে সংবর্ধিত হচ্ছিলেন বিশিষ্টজনদের দ্বারা। মঞ্চে ছিল চাঁদের হাট। বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ, আইএএস ইউনিচ রিসিন ইসলাম, আইএএস আজহার জিয়া, ডব্লুবিসিএস অফিসার জাহাঙ্গীর মল্লিক প্রমুখ। বিশিষ্টজনদের বক্তব্যের পরতে পরতে ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা আর স্বপ্নের ডালি। মঞ্চে বসে নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উত্তরণ আর সাফল্য নিজের চোখে পরখ করছিলেন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি আল-আমীন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। বার বার নিজে উঠে গিয়ে মাইক্রোফোন ধরছিলেন নুরুল সাহেব। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন নানান বিষয়। কথা বলছিলেন কখনো দায়িত্ববোধ নিয়ে, কখনো আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখা নিয়ে, কখনো মিশন গড়ার ইতিহাস নিয়ে, আবার কখনো উপস্থিত বিশিষ্টজনসহ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। মঞ্চ জুড়ে নুরুল ইসলামের কর্মচঞ্চলতা বুঝিয়ে দিচ্ছিল আল-আমীন মিশনের বর্তমান-প্রাক্তনী দিয়ে মোট ৭০ হাজার পরিবারের প্রধান তিনি নিজেই। অনুষ্ঠানের প্রথমে বক্তব্য রাখেন ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ, তিনি অকপটে জানান, ‘আল-আমীন মিশন হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর।’ শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে কল্যাণ বাবু বলেন, একটি সমাজ ও জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষা অনিবার্য। সেক্ষেত্রে একটি জাতির উন্নয়নের জন্য আল-আমীন মিশন নিরলস ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিধায়ক। জাতি সেবায় আল -আমীন মিশন এর ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মিশনের উত্তরনের জন্য শুভকামনা করেন কল্যাণ ঘোষ।
আল-আমীন মিশনের উদ্যোগ, শিক্ষা পদ্ধতি, পরিকাঠামো এবং পরিবেশ নিয়ে প্রশংসা করে ভূমিপুত্র আইএএস ইউনিচ রিসিন ইসলাম ছাত্র-ছাত্রীদের উত্তরণের দিশা দেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে নানান প্রতিবন্ধকতার দিকগুলি তুলে ধরে কিভাবে সমস্যা সমাধান করতে হয় তার পরামর্শ দেন তিনি। সমাজের কল্যাণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার এডিএম আইএএস আজহার জিয়া। তিনি তাঁর জীবনের সাফল্য পাওয়ার কাহিনী তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন। জীবনযাত্রায় শিক্ষার্থীদের সময়ের গুরুত্ব বোঝান। কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হবে এবং কিভাবে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হবে তা তিনি তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন সকলের টার্গেট পয়েন্ট থাকা উচিত শীর্ষস্থানে, তবেই সাফল্য পাওয়াটা সহজ হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি চান আল-আমীন মিশন থেকে যেভাবে ডাক্তার তৈরি হচ্ছে সেভাবে আইএএস আইপিএস অফিসারও তৈরি হোক। এ দিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় আল-আমীন মিশনের সম্পাদক এ নুরুল ইসলাম ‘আল-আমীন মিশন একাডেমি নয়াবাজ’ প্রতিষ্ঠার গল্প তুলে ধরেন এবং এই শাখার সুপারিনটেনডেন্ট খন্দকার মহিউল সাহেবের কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সকল শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। সমস্ত শুভ কাজ আল্লাহর ইবাদাত স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শুভ কাজে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন। সকলকে সু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি সুনাগরিক হয়ে ওঠারও পাঠ দেন নুরুল ইসলাম। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আইএএস-আইপিএস হওয়ার তাগিদও দেন তিনি।
‘আল-আমীন মিশন একাডেমি নয়াবাজ’-এ এদিন কৃতি সংবর্ধনা এবং প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন উৎসবের পাশাপাশি ছিল সন্ধ্যাকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে ‘আল-আমীন মিশন একাডেমির নয়াবাজ’ শাখার পক্ষ থেকে এম নুরুল ইসলামকে বিশেষভাবে সংবর্ধিত করা হয়। সংবর্ধনা দেওয়া হয় মিশনের দুই অন্যতম কর্মকর্তা দিলদার হোসেন এবং হাফিজুর রহমানকেও।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct