আপনজন ডেস্ক: বহু বছরের আলোচনার পর নিউজিল্যান্ড পেয়েছে এমন এক আইন, যাতে একটি পর্বতকে একজন মানুষের মতোই আইনি অধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মানে থারানাকি মাউঙ্গা (মাউন্ট থারানাকি) নিজের মালিকানা কার্যকরভাবে পাবে। এটি পরিচালনায় স্থানীয় উপজাতি, ইউয়ি এবং সরকারের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে কাজ করবে।
উপনিবেশ আমলে থারানাকি অঞ্চলে ভূমি বাজেয়াপ্তের মতো যে ব্যাপক অবিচারের শিকার হন মাওরিরা, তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া এই আইনের লক্ষ্য । আলোচনার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পল গোল্ডস্মিথ বলেছেন, অতীতের ভুলের কারণে যে বেদনা রয়ে গেছে তা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, যাতে ইউয়িদের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করে তাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা সহায়তা করতে পারি ।
জীবন্ত সত্তা ঘোষণার থারানাকি মাউঙ্গা কালেক্টিভ রিড্রেস বিলটি বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে পাস হয়। তাতে পর্বতটি একটি আইনি নাম পেয়েছে এবং এর আশপাশের চূড়া ও জমিকে দেওয়া হয়েছে সুরক্ষা ।
পর্বত, পূর্বপুরুষ, জীবিত প্রাণীসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে মাওরি বিশ্বদর্শন রয়েছে, সেটির স্বীকৃতি মিলেছে বিলটি পাশের মধ্য দিয়ে । রাজনৈতিক দল থে পাথি মাওরি (মাওরি পার্টি)-এর সহ-নেতা ডেবি নারওয়ে-প্যাকা বলেন, আজ, থারানাকি, আমাদের মাউঙ্গা (পর্বত), আমাদের মাউঙ্গা টুপুনা (পূর্বপুরুষের পর্বত) মুক্তি পেয়েছে অবিচার, অজ্ঞতা ও ঘৃণার শৃঙ্খল থেকে। নারওয়ে-প্যাকা নিউজিল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে আট জন থারানাকি ইউয়িদের মধ্যে এক জন, যার কাছে পর্বতটি পবিত্র । ঐ এলাকার আরো শত শত মাওরি নাগরিক বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে উপস্থিত হয়েছিলেন বিলটির আইনি রূপান্তর দেখতে ।
পর্বতটি আর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এগমন্ট’ নামে পরিচিত হবে না, যে নামটি ১৮ শতকে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ পরিব্রাজক জেমস কুক । এখন এটি ‘থারানাকি মাউঙ্গা’ নামে পরিচিত হবে, আর চারপাশ ঘিরে থাকা জাতীয় উদ্যানটিও পাবে মাওরি নাম। থারানাকি ইউয়ি থেকে আসা আইশা ক্যাম্পবেল ওয়ান নিউজকে বলেন, এই ইভেন্টে থাকা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং যে পর্বতটি যা আমাদের সংযুক্ত করে এবং যা মানুষ হিসেবে আমাদের একসঙ্গে মিলিত করে । যে চুক্তির মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং আদিবাসী জমি ও সম্পদের নির্দিষ্ট অধিকার পেয়েছিল; সেই ওয়েটাঙ্গি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতিপূরণের সবশেষ প্ৰয়াস হচ্ছে থারানাকি মাউঙ্গা বন্দোবস্ত। ১৮৬০-এর দশকে থারানাকি পৰ্বত এবং স্থানীয় মাওরিদের কাছ থেকে ১০ লক্ষাধিক একর জমি বাজেয়াপ্তের ঘটনায় সরকারের তরফে ক্ষমা প্রার্থনার অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে এই বন্দোবস্তকে । পল গোল্ডস্মিথ স্বীকার করেছেন যে, চুক্তি লঙ্ঘনের অর্থ হলো হোয়ানু (বৃহত্তর পরিবার), হাপু (উপ-উপজাতি) এবং থারানাকির ইউয়ির ব্যাপক পরিসরের ক্ষতি; যা বহু দশক ধরে অপূরণীয় হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি এও বলেন, পর্বতটিতে প্রবেশাধিকার আর পরিবর্তন হবে না এবং নিউজিল্যান্ডের সব বাসিন্দা এই জায়গাটি পরিদর্শন করতে পারবে এবং আগামী প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্দান্ত এ জায়গাটি উপভোগ করতে পারবে। নিউজিল্যান্ডে এর আগেও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জীবন্ত সত্তার স্বীকৃতি পাওয়ার নজির রয়েছে। ২০১৪ সালে উরেওয়েরা বন প্রথম এই জাতীয় মর্যাদা অর্জন পায়, তারপরে ২০১৭ সালে এমন স্বীকৃতি পায় হোয়াংগানুই নদী ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct