আপনজন ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশ সরকার এ বছর এলাহাবাদে মহাকুম্ভ মেলায় মুসলিমদের দোকানপাট বসার অনুমতি দেয়নি, এমনকি তাদের যাত্রাপথ পরিবর্তন করে বেশিরভাগ মুসলিম এলাকা এড়িযে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মহাকুম্ভ মেলায় পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জনের মৃত্যুর পর আতঙ্কিত তীর্থযাত্রীদের জন্য আশ্রয় দিতে এলাকার মসজিদ, ঈদগাহ, স্কুল, ঘরবাড়ি উন্মুক্ত করে দিলেন। শুধু তাই নয়, মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরা অসুস্থ তীর্থযাত্রীদের সেবায় নিযোজিত হযে ভ্রাতৃত্ববোধের এক নিদর্শন হয়ে থাকলেন।
প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও এলাহাবাদের স্থানীয় মুসলমানরা পদপিষ্টের ঘটনার খবর পেয়ে তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন ভক্তদের সাহায্য করতে। তাদের জন্য খাবার, জল, কাপড়, ওষুধ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেন মুসলিমরা। এলাহাবাদ থেকে এমন অনেক ভিডিও সামনে আসতে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে জি নিউজ সালাম হিন্দি পোর্টালে কুম্ভভক্তদের প্রতি মুসলিমদের এগিয়ে আসার বিস্তীর্ণ খবর সহ নানা ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে দেয়া যাচ্ছে, মসজিদের ইমাম মসজিদের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া কুম্ভযাত্রীদের খাবার বিতরণ করছেন। যাদের বস্ত্র মলিন হয়ে গেছে তাদেরকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে গায়ে চাদর তুলে দিচ্ছেন কেউ কেউ। স্থানীয় ইয়াদগারে হুসাইনি ইন্টার কলেজ খুলে দেওয়ায় ষেখানে আশ্রয় নিচ্ছেন শতাধিক কুম্ভ তীর্থযাত্রী। এই সম্প্রীতির চিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে একজন নেতা বা সাধক রাজনীতি করতে পারেন, কিন্তু মানুষের হৃদয়কে বিভক্ত করতে পারেন না। স্থানীয় মুসলমানরা কুম্ভের আয়োজনে গর্ববোধ করে। তারা এই অনুষ্ঠানের জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতেন। কুম্ভের মহিমার কারণে তিনি নিজেকে এলাহাবাদী বলতে এবং আলাদা হতে গর্বিত হলেও এবারের কুম্ভ থেকে তাদেরকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। একধরনের বিদ্বেষী সাধু-সন্ত প্রকাশ্যে কুম্ভ থেকে মুসলমানদের বয়কটের ঘোষণা দেন। এমনকি গোপনে দোকান স্থাপনকারী কয়েকজন মুসলিম দোকানদারকেও মারধর করা হয়। যদিও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি, তারা বয়কটকেই প্রাধান্য দিয়েছিল। তবে কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর মুসলমানরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। তাদেরকে বয়কটের নির্দেশ উপেক্ষা করে দুস্থ ভক্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন এলাকার মুসলমানরা। মুসলমানরা শুধু তাদের ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ এমনকি মসজিদের দরজা ভক্তদের জন্য খুলে দেননি, তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করেন। শীতের জন্য তাদের জন্য কম্বল সরবরাহ করা হয়। চকস্থ জামে মসজিদ ও খুলদাবাদে অবস্থিত মসজিদেও ভক্তদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য সরাইখানা চালাচ্ছেন এলাকার মুসলিম যুবকরা। বাইক চালানো ছেলেরা অসহায় কুম্ভ তীর্থযাত্রীদের নিয়ে আসতে সাহায্য করছেন। তাদের সেবা দিচ্ছেন মুসলিম চিকিৎসকরা। মুসলিম ডাক্তার নাজ ফাতিমা তার ক্লিনিক আহত ভক্তদের জন্য উৎসর্গ করেছেন। মানুষ তার কাজের প্রশংসা করছে। কিছু মুসলিম বসতির মধ্য দিয়ে যাওয়া ভক্তদের গায়ে ফুল বর্ষণ করতেও দেখা গেছে লোকজনকে। ভক্তদের ফুল ও বস্ত্র দিয়ে বরণ করে নেন নামাজিরা।
এবার কুম্ভ মেলার রুটটি মুসলিম এলাকা দিয়ে করা হয়নি। তাই আতালা, নুরুল্লাহ রোডের মতো মুসলিম এলাকাগুলো এ বছর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ভক্তদের আনাগোনা নগণ্য। ইলেকট্রিশিয়ান, ফিটার এবং ছুতার ইত্যাদিকেও কাজ দেওয়া হয়নি। বিহার, ঝাড়খন্ড, আসাম প্রভৃতি স্থান থেকে আসা রিকশাচালকদের কুম্ভমেলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল যারা ভক্তদের সঙ্গম তীরে নিয়ে যেতেন। স্থানীয় ব্লগার মোহাম্মদ জাহিদ লিখেছেন, র্ঘটনার পর মুসলমানদের ক্ষোভের অবসান হয়েছে। তারা আবার তাদের এলাকার ভক্তদের সেবা করতে রাস্তায় নেমেছে। তাদেরকে এলাহাবাদের অতিথি মনে করে কুম্ভমেলার তীর্থযাত্রীদের সেবা করা শুরু করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct