জিয়াউল হক , চুঁচুড়া, আপনজন: প্রেমের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১১ বছরের শিশু! সেই শিশুকে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রেমিককে চুঁচুড়া আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। আট বছর আগে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারে সোমবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং আজ, বুধবার, বিচারক তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণা করেন।
ঘটনার পটভূমি: হুগলির তিন নম্বর কৃষ্ণপুর এলাকার এক মহিলা, যিনি বিবাহবিচ্ছিন্না ছিলেন, তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ব্যান্ডেলের লিচুবাগানের বাসিন্দা অরবিন্দ তাঁতির। ওই মহিলা তাঁর বাপের বাড়িতে থাকতেন, যেখানে প্রেমিক অরবিন্দের যাতায়াত ছিল নিয়মিত। তবে এই সম্পর্কে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মহিলার ১১ বছরের ছেলে, সৌম্যজিৎ। প্রেমিকের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না সে, আর এই কারণেই অরবিন্দ ক্রমাগত বিরক্ত বোধ করছিলেন।
এই নিয়েই প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে একাধিকবার অশান্তি হয়। তারই মধ্যে, ২০১৭ সালের ৭ জানুয়ারি এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। সৌম্যজিৎকে বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিস্কুট কিনে দেওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান অরবিন্দ। এরপর, ঠান্ডা মাথায় শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করেন। খুনের পর, শিশুটির মৃতদেহ হুগলি স্টেশন সংলগ্ন একটি মন্দিরের পাশে ফেলে রেখে আসেন তিনি, যাতে সেটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু কিংবা দুর্ঘটনা বলে চালানো যায়।
তদন্ত ও মামলা:পরদিন সৌম্যজিতের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর তাঁর মা-ই সন্দেহ প্রকাশ করে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শুরু হয় এবং একাধিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত অরবিন্দ তাঁতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দীর্ঘ আট বছর ধরে মামলাটি চলতে থাকে।
মামলার সরকারি আইনজীবী সুব্রত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষীর বক্তব্য শোনা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়। সমস্ত দিক বিচার করে চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সঞ্জয় শর্মা সোমবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
সাজা ঘোষণা: আজ, বুধবার, বিচারক অরবিন্দ তাঁতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন। আদালতের এই রায় বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার প্রতিফলন ঘটায় এবং শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সমাজে প্রতিক্রিয়া:এই নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং আদালতের রায় নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিশুটির মা আদালতের এই রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, “আমার সন্তানের জন্য বিচার পেলাম, কিন্তু এই শাস্তি কখনও আমার সন্তানের জীবন ফিরিয়ে আনতে পারবে না।” অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রায় সমাজে একটি কড়া বার্তা দেবে যে শিশুহত্যা বা অন্য কোনও অপরাধের বিরুদ্ধে আইন যথেষ্ট কঠোর এবং অপরাধীরা কোনোভাবেই পার পাবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct