আপনজন ডেস্ক: মঙ্গলবার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলা মাঠে ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলাগুলি মধ্যে অন্যতম কলকাতা বইমেলা যেখাসে সারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর সমাগম হয়। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য দেশ জার্মানি।
ভারতে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. ফিলিপ অ্যাকারম্যান এবং দক্ষিণ এশিয়ার গ্যোটে-ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মারলা স্টুকেনবার্গ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রতি বছর এই বইমেলা বড় হয়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্য পরিমণ্ডলে প্রাধান্য পায়।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে কলকাতা বইমেলার প্রতি জনসাধারণের ভালবাসার কথাও তুলে ধরেন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বব্যাপী উপস্থিতি সত্ত্বেও বই চিরসবুজ। তিনি বলেন, বইমেলা আমাদের অহংকার। গত বছর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। আমার বিশ্বাস, এ বছর পর্যটকের সংখ্যা ৫০ লক্ষ থেকে এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জার্মানি বইমেলার পথিকৃৎ, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এই উপলক্ষে আমি উল্লেখ করতে চাই যে আমাদের মহান নায়ক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জার্মানির সঙ্গে গভীর যোগাযোগ ছিল। সেখানেই থাকেন তাঁর মেয়ে অনিতা। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই জার্মানির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে।
ভারত ও ভুটানে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অ্যাকারম্যান কলকাতা বইমেলাকে ‘কুম্ভমেলা, বাঙালি স্টাইল’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, কলকাতা তার সমৃদ্ধ বহুসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তার জাদুঘর, তার মন্ত্রমুগ্ধকর উৎসব সহ ভারতের বৌদ্ধিক ও শৈল্পিক হৃদয়। শহরের বই পড়া, বুদ্ধিবৃত্তিক বিনিময় এবং জ্ঞান বিনিময়ের ঐতিহ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি বইমেলার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হতে পারে না। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, বইমেলার প্রাঙ্গণে সলিল চৌধুরী, ঋত্বিক ঘটক, জীবানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, গ্যোটে, ম্যাক্স মুলার, হ্যাকেশেন হোফে, ব্রান্ডেনবার্গ, রাইনার মারিয়া রিলকে, বের্টোল্ট ব্রেখট, ফ্রাঞ্জ কাফকা, হের্টা মুলার, টমাস মান প্রমুখ বাঙালি ও জার্মান শিল্পী, লেখক ও সংগীতজ্ঞদের জন্য অনেক গেট এবং রাস্তা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন একদল তরুণ বাঙালি প্রকাশক। আর ১৯৭৬ সালের ৫ মার্চ মাত্র ৫২টি বইয়ের স্টল নিয়ে শুরু হয় প্রথম কলকাতা বইমেলা। এবারের বইমেলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, নেপাল, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, গুয়াতেমালা, কোস্টারিকাসহ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের প্রকাশক ও বই বিক্রেতারা বিদেশি প্যাভিলিয়নে অংশ নেবেন। বইমেলায় বাংলাদেশ ছাড়া সব দেশি-বহুজাতিক প্রকাশনা সংস্থার উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ বছর সে দেশ থেকে কোনো প্রকাশক ও বই বিক্রেতা অংশ নিচ্ছেন না।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রকাশক ও লিটল ম্যাগাজিনে সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়েছে প্রায় এক হাজার বড়, ছোট ও মাঝারি আকারের স্টল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট লেখক আবুল বাশারকে গিল্ড লাইফটাইম লিটারেরি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবারের বইমেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। তার মদ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল লিপিবদ্ধ কিছু কাজও ও স্যালুট ২। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের দমকল ও জরুরি পরিষেবা মন্ত্রী সুজিত বসু, কৃষি প্রতিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়, গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে, কবি ুবোধ সরকার প্রমুখ। বইমেলায় আগত সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে প্রথমবারের মতো বিশেষ ম্যাসকট থাকছে হাসো ও হাসি নামের দুটি হাঁস।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct