এম এস ইসলাম , বর্ধমান, আপনজন: সেহারাবাজার রহমানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনের চেতনা উৎসব সাড়া ফেলেছে সারা জেলায়। শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সম্প্রীতি এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতির বার্তা নিয়ে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যাঁরা শিক্ষার গুরুত্ব এবং মানবিকতার বার্তা দেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রতীচী ট্রাস্টের আন্তর্জাতিক কো-অর্ডিনেটর এবং বিশিষ্ট গবেষক সাবির আহমেদ। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সবর তথা ধৈর্য ধরতে হবে এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। একসময় মাদ্রাসাগুলি আধুনিক শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সীতাপুর মাদ্রাসা ১৭৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ ছিল। মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার কোনো বিরোধ নেই। এখান থেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সম্ভব।”
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি নিজে পিজি হাসপাতালের এক হাফেজ ছাত্রের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, যিনি এখন একজন সফল ডাক্তার। শুধু মুসলিম নয়, রাজা রামমোহন রায়ের মতো ব্যক্তিত্বও মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করেছেন।”
সাবির আহমেদ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মোবাইল থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা হাতের কাছে যা পাবো, তা পড়ার জন্য ব্যবহার করব। এমনকি ঠোঙার লেখাও পড়ে শেখা যায়। আমাদের একটি পড়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং পড়ার উৎসব আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সম্পর্কে জানতে হবে। ‘নো ইওর নেবার’ প্রোজেক্ট ইতিমধ্যেই সারা ফেলেছে। এই উদ্যোগ আমাদের সমাজে সম্প্রীতি ও উন্নতির বার্তা ছড়াতে সাহায্য করবে।”
চেতন উৎসবে রাজ্যের সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, “খেদমতে খালক, অর্থাৎ সৃষ্টির সেবা করা, পরম ধর্ম। শুধু মানুষ নয়, জীবজন্তু এবং গাছপালার প্রতিও সহানুভূতি দেখাতে হবে।”
তিনি সেহারা বাজার রহমানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সম্পাদক হাজী কুতুব উদ্দিনের উদ্যোগকে প্রশংসা করে বলেন, “মানুষের চেতনা জাগ্রত করার কাজ তিনি অসাধারণভাবে করে চলেছেন।”
চেতনা উৎসবের প্রথম দিন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ডঃ রমজান আলী , উপস্থিত ছিলেন জয়রামবাটি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রমের সম্পাদক স্বামী প্রভুদানন্দ মহারাজ, জাতীয় শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত, খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ, খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মীর শফিকুল ইসলাম ,সেহারা ট্রাফিক ওসি রক্তিম দত্ত, এবং সেহারা আউট পোস্টের বড়বাবু রাহুল দাস সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
হাজী কুতুব উদ্দিন বলেন, “চেতনার উৎসবের মূল উদ্দেশ্য মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটানো। আমাদের সবার উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। একমাত্র মানবতার চর্চার মাধ্যমেই একটি সুস্থ সমাজ তৈরি করা সম্ভব।”
তিন দিনের এই উৎসবে এলাকার ২০০ দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সাইকেল দেওয়া হয় এবং কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মানিত করা হয়।
সেহারাবাজার রহমানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের এই উদ্যোগ গোটা অঞ্চলে প্রশংসিত হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct