জয়দেব বেরা: কালিপুর নামক স্থানে একটা বিশাল বড় শ্মশান ছিল। খুবই ভয়ংকর দেখতে। শ্মশানের নাম ছিল ডাকিনি শ্মশান। রাতের বেলায় মানুষজন খুব বেশি ঐদিক দিয়ে যাওয়া-আসা করে না। শ্মশানটি একদম ফাঁকায় রয়েছে। চারিদিকে সুনসান। এই শ্মশান এর বৈশিষ্ট্য হল বছরে তিনটি করে মড়া নেবে। একজন মরলেই এরপর শ্মশানটি নাকি রাতে ডাক দেয়। এই ডাক সবাই শুনতে পায়। মাঝরাতে আয়...!আয়...!আয়...! বলে ডাকে। এই ডাক শুনতে পেয়ে কেউ যদি ভুলবশত শ্মশানের কাছে চলে যায় সেই মুহূর্তে সে মারা যায়। যতক্ষণ না তিনজন মরছে শ্মশানটি ডাকতেই থাকে। সবাই তাই ভয়ে খুব চিন্তিত থাকে,এই বুঝি আমার পালা এলো। এমনি কেউ মারা গেলে ঠিক আছে নাহলে শ্মশান ডাকে এবং যেকেউ এই ডাকে সাড়া দিয়ে যদি ভুলবশত শ্মশানে চলে যায় তাহলে সে মারা যায়। তাই তো এই শ্মশানের নাম ‘ডাকিনি শ্মশান’।
এইভাবেই চলতে থাকে কালিপুরের ডাকিনি শ্মশানের ঘটনা। গ্রামবাসী এই বিষয়টি নিয়ে সবাই খুবই চিন্তিত। তাই তারা এই সমস্যার সমাধান করতে এক তান্ত্রিকের পাশে যায়। আর গিয়ে বলে,কীভাবে এই ডাকিনি শ্মশানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তান্ত্রিক বললেন,অমাবস্যার রাতে যজ্ঞ করতে হবে ওই শ্মশানে। সবাই তো শুনেই ভয়েই কাঠ হয়েগেছে। তান্ত্রিক এও বলেন যে এই যজ্ঞে কারুর ক্ষতি হলেও হতে পারে। তবে সবাই ভয় পেলেও রাজি হয়ে যায়।
এরপর একদিন অমাবস্যার দিন রাতে তান্ত্রিক সহ তার কিছু শিষ্য এবং গ্রামবাসী সবাই ওই ডাকিনি শ্মশানে উপস্থিত হয়। তখন বাজে রাত বারোটা। ভয়ানক পরিস্থিতি, চারিদিকে অন্ধকার,হালকা ঝড় উঠেছে। শ্মশান ইতিমধ্যে ডাকাও শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তান্ত্রিকের মন্ত্রবলে কারুর ক্ষতি হয়নি। রাতে ওই শ্মশানে উপস্থিত হয়ে তান্ত্রিক মহা যজ্ঞ শুরুও করে দেয়। গ্রামবাসীদের বলে আমি একটা গন্ডি কেটে দিচ্ছি তোমরা সবাই এই গন্ডির মধ্যেই থাকবে। যতই বিপদ হোক কেউ এই গন্ডির মধ্য থেকে বেরোবে না। এই বলে তান্ত্রিক ও তার শিষ্যরা যজ্ঞ শুরু করে দেয়। যজ্ঞ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শ্মশানটি যেন কেঁপে উঠে। সে কী ভয়ানক পরিস্থিতি। কোনও রকম তান্ত্রিক মন্ত্র বলতে থাকে আর এর মাঝে নানান বাধা শুরু হয়। একজন তো গন্ডির বাইরে ভুলে বেরিয়ে পড়ে তাই সে মারাও যায়। তবে তান্ত্রিক যজ্ঞ চালিয়ে যেতেই থাকে। এরপর মন্ত্র শক্তি দিয়ে শ্মশানের চারপাশে কিছু হাড় পুঁতে দেয়। তারপর যজ্ঞ সফল হয়। এরপর তান্ত্রিক বলতে লাগলো,একটা কথা সবাই মনে রাখবেন এই শ্মশান আর ডাকবে না কিন্তু যদি কেউ শ্মশানের কাছে এসে মরার কথা ভাবে তখন কিন্তু এই শ্মশান তাকে ডেকে নেবে। তাই খুব সাবধান। আর প্রতিবছর শ্মশান কালি মায়ের পুজো করতে হবে এইখানে। এইবলে সবাইকে নিয়ে তান্ত্রিক চলে যায়। আর কিছুক্ষণ পর সকাল হয়ে যায়। এর পর থেকে শ্মশানটি যদিও আর ডাকে না তবে যে তার পাশে গিয়ে রাতে মরার কথা ভাবে তাকে ডেকে নেয়। শোনা যায় আজও নাকি সেখানে রয়েছে এই ডাকিনি শ্মশান। তান্ত্রিকের কথা মতো আজও সেই শ্মশানে শ্মশান কালি মাতার পুজো হয়। তবে এখনও রাতে কেউ ওই ডাকিনি শ্মশানের পাশ দিয়ে সেভাবে আর যাওয়া-আসা করে না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct