এম মেহেদী সানি , খলতপুর, আপনজন: শনিবার মহাসমারোহে শুরু হল আল-আমীন মিশনের দুদিন ব্যাপী ‘আল-আমীন উৎসব’। পিছিয়ে পড়া সমাজের উত্তরণের লক্ষ্যে গড়ে তোলা আল আমীন মিশনের পতাকা উত্তোলন করে বার্ষিক উৎসবের সূচনা করেন পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শহীদুল্লাহ মুন্সি। শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন মিশনের শিক্ষার্থী। স্বাগত ভাষণের মধ্যে দিয়ে আল-আমীন মিশন গড়ার গল্প শোনান প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এম নূরুল ইসলাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে যাদের অবদান ছিল তাদের কথা স্মরণ করে নাম বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। চোখ মুছে সামলে নেন নিজেকে।
এম নুরুল ইসলাম আল আমীন মিশনের প্রতিষ্ঠা লগ্নের কথা তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে আজ যে মহীরুহে পরিণত হয়েছে তার স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, প্রায় সবার জীবনে একটা করে গল্প আছে। প্রাক্তনীদের জীবনের বুনিয়াদের শুরু এই আল আমীন মিশন থেকে। একটা দিন আসবে যখন তাদের জীবনী লেখা হবে। আল আমীন মিশনের একটি গল্প আছে। ৪৯ বছর আগে খলতপুর জুনিয়র মাদ্রাসা থেকে আল আমীন মিশনের শুরু। মাসে মাসে পাড়ায় পাড়ায় থেকে চাল সংগ্রহ করে শুরুয়াত হয় আল আমীন মিশনের। সেই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানে গড়ে ওঠে আল আমীন মিশন। রামকৃষ্ণ মিশনের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ১৯৮৬ আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলাম ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক কালচার নামে। ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারিতে সেটার নতুন নামকরণ হয় আল আমীন মিশন। সাতজন ছাত্রকে নিয়ে শুরু হয়েছিল আল অামীন মিশন। এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। ৪৭ হাজার প্রাক্তনী রয়েছেন যাদের মধ্যে হাজার হাজার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি আধিকারিক, শিক্ষক নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান।
তিনি আরও বলেন, এতিমরা যারা শিক্ষাক্ষেত্র থেকে হারিয়ে যায় তাদেরও আশ্রয় স্থল হয়ে উঠেছে এই আল আমীন মিশন।
এম নুরুল ইসলামের লক্ষ্য এখন ‘ভিশন ২০৩০’। সে প্রসঙ্গে নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য বেশি বেশি করে কাজ করতে পারি। হাজার হাজার শিশু যারা হারিয়ে যাচ্ছে অর্থের অভাবে, পরিবেশের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিকশিত করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজই আগামী দিনে করতে চাই। যাতে আমাদের রাজ্য, আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ আরও উন্নততর দিকে এগিয়ে যেতে পারে। সেটাই আল আমীন মিশনের ‘ভিশন ২০৩০।’ পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শহীদুল্লাহ মুন্সি বলেন, নুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে আল আমীন মিশন যেভাবে কাজ করে চলেছে বাংলা তথা দেশের কাছে গর্ব। আমাদের মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে স্বাধীনতার পর থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা আসা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারিনি। খোলস বলতে ধর্মীয় গোড়ামি এবং সংকীর্ণতার কথা তুলে ধরে নারী শিক্ষার অগ্রগতি ক্ষেত্রে সকলকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান। ভবিষ্যৎকে আলোকিত করতে নারীদেরকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমস্ত সংকীর্ণতা এবং ধর্মীয় গোঁড়ামিকে পিছনে ফেলে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান শহীদুল্লাহ মুন্সী।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় আমার সুযোগ সুবিধা পেলেও তা কাজে লাগাতে পারিনি। কিন্তু
আজকে আল আমীনের শিক্ষক সমাজ ছিল বলেই, আল আমীন দিশা দেখাচ্ছে বলেই আমাদের মতো বাড়ির ছেলে মেয়েদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারছি।
কুরআন হাদিসের মহল তৈরি হয়েছে আল আমীন মিশন এর মধ্যে। সেটাকে অনুসরণ করে আমরা এগিয়ে যেতে পারি বলে জানান শহীদুল্লাহ মুন্সী।
স্থানীয় বিধায়ক সমীর কুমার পাঁজা বলেন, সারা রাজ্য তথা দেশ, এমনকি দেশের বাইরেও আল আমীন মিশনের সুনাম এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের নিরলস পরিশ্রম, তাদের ম্যানেজমেন্ট, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সার্বিক প্রয়াস একটি মহৎ কাজ করে চলেছে। সেটা আমাদের কাছে গর্বের, আমাদের অহংকারের।
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আরো বেশি বেশি করে তোমরা সমাজের মধ্যে উন্নততর মানুষ তৈরি হবে। শুধু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার নয়, সুন্দর মানুষ তৈরি হয়ে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে।
আল আমীন মিশনের সুপারভাইজর মারুফ আজম বলেন, এবছর মাধ্যমিকে ২১৬৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯৬ শতাংশ নম্বর পাওয়া ২১ জন এবং ২১৬৪ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া ২৬ জনকে সংবর্ধিত করা হয় মিশনের পক্ষ থেকে অন্যদিকে। ৬৫০ নম্বরের বেশি পেয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়া ৩৩২ জনকে সংবর্ধিত করা হয়েছে।
আল আমীন মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস অফিসার পদে কর্মরত প্রায় ১২০ জনের মধ্যে এ দিন উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর মল্লিক। বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করেন তিনি। আল আমীন উৎসবে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আলতামাস গাজী, ডা. এম ভট্টাচার্য, ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য ইমরান আব্বাস রিজভি, এ জেড খান সহ আল আমীন মিশনের বহু উজ্জ্বল প্রাক্তনী প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct