আপনজন ডেস্ক: ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম—মুম্বাইয়ের এ মাঠ অন্তত দুটি কারণে শচীন টেন্ডুলকারের মনে আজীবনের জন্য গেঁথে থাকার কথা। একটি বিশ্বকাপ জয়, আরেকটি খেলোয়াড়ি জীবনের বিদায়। ২০১১ সালে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তুলেছিলেন ওয়াংখেড়েতে। দুই বছর পর ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে ক্রিকেটকে বিদায়ও জানিয়েছিলেন এ মাঠেই। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা কিংবদন্তি ওয়াংখেড়েকে মনের মধ্যে বিশেষ স্থান দেন অন্য একটি কারণেও। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই যুগসহ প্রায় তিন দশক প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর মা মাত্র একবারই ছেলের খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন, আর সেটি এই ওয়াংখেড়েতেই। তা–ও ক্রিকেটের বাইশ গজকে ছেলের বিদায় জানানোর দিনে। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ৫০ বছর পূর্তিতে গতকাল বিশেষ আয়োজনে উপস্থিত হয়ে সে গল্পই শুনিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম গত বছর ৫০ পূর্ণ করেছে। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রোববার স্টেডিয়ামের অতীত ও বর্তমানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।
টেন্ডুলকার একে তো ওয়াংখেড়ের কীর্তিমানদের একজন, তার ওপর মুম্বাইয়েরই ছেলে। ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ওয়াংখেড়েতে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর স্মৃতি স্মরণ করে টেন্ডুলকার বলেন, ‘সিরিজের দল ঘোষণার আগে আমি বিসিসিআইয়ের তখনকার প্রধান শ্রীনিবাসনকে অনুরোধ করেছিলাম, একটা কারণে শেষ ম্যাচটা আমি মুম্বাইয়ে খেলতে চাই। ২৪ বছর ধরে আমি ভারতের হয়ে খেলছি, এর আগেও যা খেলেছি সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ বছর। এতগুলো বছরের মধ্যে আমার মা কখনো আমাকে খেলতে দেখেনি।’
টেন্ডুলকারের মায়ের শরীর তখন দূরে কোথাও গিয়ে ছেলের খেলা দেখার মতো অবস্থায় ছিল না। সর্বোচ্চ মুম্বাইয়ের বাসা থেকে ওয়াংখেড়েতে গিয়ে খেলা দেখতে পারবেন। শ্রীনিবাসনকে সে পরিস্থিতি জানিয়ে টেন্ডুলকার বলেছিলেন, ‘আমি অনুরোধ করলাম শেষ ম্যাচটা ওয়াংখেড়েতে খেলতে চাই। মাকে দেখাতে চাই, তাঁর ছেলে ২৪ বছর ধরে কিসের জন্য বাড়ি ছাড়ত। বিসিসিআই অনুগ্রহ করে আমার অনুরোধটা রেখেছিল। এরপর এই ওয়াংখেড়েতে শেষ ম্যাচটা খেললাম, যেটা ছিল আমার জন্য আবেগময় মুহূর্ত। এত এত বছর খেলার পর সেবারই শেষবারের মতো মাঠে নামলাম, যেটা আমার জীবনে আর কখনোই ঘটবে না।’
টেস্টে সর্বোচ্চ রানের (১৫৯২১) মালিক তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ কতটা আবেগময় ছিল, সেই অনুভূতিও তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, ব্যাটিংয়ের সময় যতটা সম্ভব খেলায় মনোযোগ দিতে চাইলেও সম্প্রচারের কাজে থাকা ক্যামেরাম্যান ও নির্দেশকের কাজও তাঁকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল, ‘(আউটের আগে) শেষ ওভারের আগে দেখলাম, বড় স্ক্রিনে আমার মায়ের মুখটা দেখাচ্ছে। এরপর অঞ্জলী, আমার বাচ্চারা...আমার পরিবারের সদস্যরা। আমি জানি না ক্যামেরাম্যানকে যিনি নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, তিনি বা ভেতরে থাকা সম্প্রচারক ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাসপোর্টধারী ছিলেন কি না! আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, তারা (ক্যামেরাম্যান) ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কাজ করছে। তারা আমার আবেগ নিয়ে খেলছে।’
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct