আপনজন ডেস্ক: জার্মানিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ লাখ প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সংকটও রয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান ভাগনার বিদেশে বসবাসরত জার্মানদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি বুন্ডেসটাগ নির্বাচনে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাইলে এখনই নির্বাচনী নথিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। সময়মতো ব্যালট পেপার সংগ্রহ করা, তা পূরণ করা ও সময়মতো জার্মানিতে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারটা এত সহজ নয়।
গত ডিসেম্বরে জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বুন্ডেসটাগে আস্থা ভোটে হেরে যান। এর পরই জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেন।
ভাগনার অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘কিছু দেশে স্বাভাবিক জার্মান সংসদীয় নির্বাচনের সময়ও চ্যালেঞ্জে পড়তে হতে পারে।
কোথায় বাস করছেন তার ওপর নির্ভর করে, বিদেশে বসবাসরত কিছু জার্মান সময়মতো তাদের ব্যালট পেপার না-ও পেতে পারেন।’ নিয়মিত নির্বাচনে বিদেশে জার্মান দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তারা সময় পাচ্ছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ। প্রবাসী জার্মানদের মধ্যে যারা ভোট দিতে চান, তাদের জার্মানির ২৯৯টি নির্বাচনী এলাকার যেকোনো একটির ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধন করাতে হবে। সাধারণত জার্মানিতে সেই ব্যক্তির সর্বশেষ আবাসস্থলকেই নির্বাচনী এলাকা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দেশ এটি ভিন্নভাবে পরিচালনা করে। যেমন, ২০২৩ সালের মে মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা ভোটে জার্মানিতে প্রায় ১৫ লাখ তুর্কি নাগরিকের ভোটাধিকার ছিল। তারা জার্মানির কনস্যুলেটসহ ১৭টি ভিন্ন স্থানে ভোট দিতে পেরেছিলেন। বুন্ডেসটাগ নির্বাচনে এটি সম্ভব নয়।
ভাগনার বলেন, ‘জার্মানিতে শুধু দূতাবাসে ভোট দেওয়ার কোনো বিধান নেই। আমাদের নির্বাচনীব্যবস্থায় এটি নেই।’ কিন্তু এখন জার্মানির নির্বাচনী এলাকায় শুধু একটি ই-মেইল পাঠিয়েই নথিপত্র পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা সম্ভব। এটি অবশ্য একটি আনুমানিক সংখ্যা। ভাগনার বলেছেন, ‘বিদেশে নিবন্ধনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তাই আমরা শুধু কতজন জার্মান বিদেশে আছেন এবং তাদের মধ্যে কতজন ভোট দেওয়ার যোগ্য, তা অনুমান করতে পারি। আমরা ধরে নিচ্ছি, এই সংখ্যা মোট ৩০ থেকে ৪০ লাখ।’ আরো অনেক জার্মান বিদেশে থাকেন, কিন্তু তাদের সবাই ভোট দেওয়ার অধিকারী নন।
জার্মানিতে শুধু নাগরিক হলেই ভোট দেওয়া যায় না। ১৪তম জন্মদিনের পর অন্তত তিন মাস টানা জার্মানিতে অবস্থান করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও বাড়তি নিয়ম রয়েছে। যেমন জার্মানিতে বসবাসের সময়কাল টানা ২৫ বছরের বেশি হলে চলবে না। অর্থাৎ যেসব জার্মান শুধু মাঝেমধ্যে জার্মানিতে অল্প সময়ের জন্য এসেছেন, তাদের অনেকেই ভোট দেওয়ার যোগ্য নন। যাদের জার্মান পাসপোর্ট আছে, কিন্তু কখনো জার্মানিতে আসেননি, তারাও ভোট দিতে পারবেন না। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন, তিনি বা তারা ‘ব্যক্তিগতভাবে ও সরাসরি জার্মানির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত এবং এর দ্বারা প্রভাবিত’, তাহলে তাদের ভোটাধিকার থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, যারা জার্মানিতে কাজ করেন বা এমন জার্মান কম্পানিতে শেয়ার রয়েছে, যেটিতে অনেক লোক কাজ করেন।
শুনে নিশ্চয়ই প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল মনে হচ্ছে। সম্ভবত এ কারণেই ২০২১ সালের বুন্ডেসটাগ নির্বাচনে প্রবাসী ৩০-৪০ লাখ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র এক লাখ ৩০ হাজার জার্মান। তাদের বেশির ভাগই ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাজ্য বা তুরস্কের মতো অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রে বসবাসরত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভোট পড়েছে মাত্র সাত হাজার ৭০০, এশিয়া থেকে পাঁচ হাজার ৩০০ এবং কানাডা, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ মিলিয়ে ভোট দিয়েছেন মাত্র দেড় হাজার জার্মান।
প্রয়োজন জরুরি ডাক পরিষেবা
বিদেশে থেকে ভোট দেওয়ার আবেদন করতে ইচ্ছুক জার্মানদের জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে। ভাগনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিশ্বের ১৫৪টি জার্মান দূতাবাস ও ৫০টি সাধারণ কনস্যুলেট এ ব্যাপারে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই দেখছি, আমরা সহায়তা প্রদানের জন্য কী করতে পারি। নির্বাচনী নথিপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে, আমরা অফিশিয়াল কুরিয়ার পরিষেবা ব্যবহার করেছি।’
এর অর্থ হচ্ছে ভোটার চাইলে ভোটদানের নথিপত্র ‘সিল’ করা খামে দূতাবাসে আনলে জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর বার্লিন বা বন অফিসে সেটা পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। সেখান থেকে এটি ডাকযোগে চলে যাবে নির্বাচনী এলাকায়। ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভোটারের ব্যালট নির্বাচনী এলাকাতে পৌঁছতে হবে।
অবশ্য এটিও বেশ জটিল। ভাগনার বলছেন, ‘কখনো কখনো বাণিজ্যিক এক্সপ্রেস ডাক পরিষেবা দ্রুততর হয়।’ বাস্তবে বিদেশে বসবাসকারী জার্মানদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, জার্মানির একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে পাঠানো নথিপত্রগুলো নিয়ে সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করে নিজেই এক্সপ্রেস মেইলে ফেরত পাঠানো।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct