এম এস ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: পূর্ব বর্ধমান জেলার গর্ব সায়নী দাসের নামে যুক্ত হলো আরেকটি অনন্য কীর্তি। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে তিনি গ্রহণ করলেন তেনজিং নরগে অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড। ভারতের অন্যতম সেরা সম্মানগুলির মধ্যে এটি একটি, যা দুঃসাহসিক অভিযানে অসামান্য সাফল্যের জন্য প্রদান করা হয়।
সায়নী দাস তার অসাধারণ দক্ষতা ও অধ্যবসায় দিয়ে কেবল পূর্ব বর্ধমান নয়, গোটা দেশ তথা এশিয়ার গর্ব হয়ে উঠেছেন। ভারতের প্রথম মহিলা হিসেবে নর্থ চ্যানেল জয় এবং এশিয়ার প্রথম মহিলা হিসেবে সপ্তসিন্ধুর পাঁচটি চ্যানেল জয় করার বিরল কৃতিত্ব তার। তিনি ইতিমধ্যেই জয় করেছেন ইংলিশ চ্যানেল, ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটালিনা চ্যানেল, হাওয়াইয়ের মলোকাই চ্যানেল, নিউজিল্যান্ডের কুক প্রণালী এবং আয়ারল্যান্ডের নর্থ চ্যানেল। সাইনি দাসের স্বপ্নটা শুরু হয়েছিল অনেক আগে। ২২ বছর আগে বাংলার আরেক সাঁতারু বুলা চৌধুরী এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। দেশের ক্রীড়া যুব কল্যাণ দপ্তরের এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ১৫ লক্ষ টাকা। সায়নী দাসের আগামী লক্ষ্য জিব্রাল্টার চ্যানেল । যার যাতায়াত খরচা ও অন্যান্য খরচা করতে এই পয়সা সাহায্য করবে ।
সায়নীর এই যাত্রা সহজ ছিল না। প্রতিটি চ্যানেল জয় করতে গিয়ে তাকে লড়াই করতে হয়েছে প্রবল ঠান্ডা, উত্তাল ঢেউ, স্রোতের বিপরীতে এবং জেলিফিশের আক্রমণের মতো অসংখ্য প্রতিকূলতার সঙ্গে। কিন্তু তার অদম্য সাহস এবং একাগ্রতা তাকে প্রতিটি বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে। তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, নিরলস প্রশিক্ষণ এবং নিয়মানুবর্তিতার গল্প। প্রতিদিন ভোরবেলায় শুরু হওয়া তার অনুশীলন পর্ব, সাঁতারের প্রশিক্ষণ এবং শরীরচর্চার পাশাপাশি তিনি সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তার এই যাত্রায় পরিবারের পাশাপাশি প্রশিক্ষকেরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সায়নী কেবল একজন সাঁতারু নন, তিনি একজন সমাজসেবীও। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত মেয়েদের আত্মরক্ষার কর্মশালা ‘অপরাজিতা’-তে অংশগ্রহণ করে তিনি মেয়েদের সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়েছেন। তার এই উদ্যোগ নারীদের আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সায়নীর স্বপ্ন সপ্তসিন্ধুর বাকি দুইটি চ্যানেল জয় করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম চিরস্থায়ী করা। এই সম্মান তার জন্য নতুন উদ্দীপনা যোগাবে। রাষ্ট্রপতি ভবনের মঞ্চে এই বিরল সম্মাননা অর্জনের মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য গুণী ব্যক্তিত্ব। সায়নীর কৃতিত্ব আগামী প্রজন্মকে ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে এবং এক আদর্শ হয়ে থাকবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct