আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (এমএমসিএইচ) ১২ জন সিনিয়র চিকিৎসক এবং স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থীকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি আরও বলেন, সিআইডি তাদের তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনবে। হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা আমাদের বিশেষ মেডিকেল টিমের রিপোর্ট পেয়েছি। ঘটনার তদন্তকারী সিআইডি দল একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যারা সেদিন হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন, তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে নতুন মাকে বাঁচানো যেত। দেখা যায়, সিনিয়র চিকিৎসক ও অন্যরা গাফিলতি করেছেন। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। অবহেলাও অপরাধ বলে মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব এন এস নিগমের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। জীবিত তিন মা কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা তৈরি করে সমস্ত সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সাসপেন্ড হওয়া ১২ জন চিকিৎসকের নাম পড়ে শোনান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “অন্য কোনও রোগীর হাতে পড়লে কী হবে জানি না। তিনি আরও বলেন, ডাক্তারদের প্রতি আমার সহানুভূতি আছে। কিন্তু কোনো অন্যায় করলে তা মেনে নিতে পারব না। তাই দুটি রিপোর্ট দেখে এবং মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের পরামর্শ নিয়ে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘কর্তব্যরত একজন সিনিয়র চিকিৎসক সেদিন হাসপাতাল ছেড়ে ৪০ কিলোমিটার দূরে আরেকটি (বেসরকারি হাসপাতালে) কাজ করতেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সমস্যার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সিআইডি অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করবে এবং আইন অনুযায়ী তদন্ত চালিয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ওষুধের দোকানে অডিট করা হয়। আমরা যে অন্তঃসত্ত্বা তরল নিয়ে আলোচনা করছি, কিছু রাজ্য এখনও এটি ব্যবহার করছে। এর পেছনে কোনো গল্প আছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা ইতোমধ্যে এর ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা পুনরায় পরীক্ষা নেব এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেব। বিকল্প থাকলে আমরা তা বিবেচনা করব। এটি একটি গুরুতর বিষয় এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের এতে জড়িত হওয়া উচিত।
সাসপেন্ড হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন এমএমসিএইচের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, দু’জন সহকারী অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, একজন সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার এবং হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল ছাড়াও ছয়জন স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী।
মুখ্যমন্ত্রী পন্থ ও নিগমকে রাজ্য সরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের গেটের কাছে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন নিশ্চিত করতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘যেসব চিকিৎসক আপত্তি করেন, দয়া করে তাদের চলে যেতে বলুন। চিকিৎসকদের একাংশ তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না। সবগুলো নয়। আমাদের আট ঘণ্টা ডিউটি আছে। সিনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতালে এলেও দুই ঘণ্টা পর চলে যান বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করার জন্য। এটা বরদাস্ত করা যায় না। স্যালাইনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘সব হাসপাতালে ফার্ম বা কোম্পানির সব ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠিয়েছি। ওষুধ সরবরাহের জন্য আমরা অন্যান্য সংস্থাগুলিরও দিকে নজর রাখছি। মুখ্যসচিব পন্থ জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সি-সেকশন ডেলিভারির সময় সিনিয়র চিকিৎসকদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রটোকল মানা হয়নি। জুনিয়র ডাক্তাররা ওটিতে ডেলিভারি করেন। এক মহিলার বেডের টিকিটে দেখা গিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছে যে কোনও মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকরা দায়ী হবেন না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct