আপনজন ডেস্ক: সুদানের স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, রাজধানী খার্তুমের বৃহত্তর এলাকায় গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১২০ জন প্রাণ হারিয়েছে। দেশজুড়ে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে লড়াই তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই হতাহতের ঘটনা ঘটল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মীদের একটি নেটওয়ার্কের অংশ ওমবাদা ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুম বলেছে, ওমদুরমানের পশ্চিমাঞ্চলে সোমবারের এই ‘এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণে’ ১২০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এই সংখ্যাকে ‘প্রাথমিক হিসাব’ উল্লেখ করলেও কে বা কারা এ হামলা চালিয়েছে তা তারা জানায়নি। এ ছাড়া উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, গোলাবর্ষণে বিভিন্ন মাত্রার আহত বিপুলসংখ্যক মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা চরমভাবে চিকিৎসাসামগ্রীর সংকটে ভুগছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই জেনারেলের বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুদ্ধ চলছে। ওদুরমানের বেশির ভাগ এলাকা সেনাবাহিনীর দখলে থাকলেও প্রতিপক্ষ আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) খার্তুমের উত্তরের অংশ ও রাজধানীর অন্যান্য কিছু এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। নীল নদের উভয় তীরের বৃহত্তর খার্তুমের বাসিন্দারা নিয়মিত নদীর ওপারে গোলাবর্ষণের খবর দিচ্ছে, যার ফলে বোমা ও গুলি প্রায়ই বাড়িঘর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আঘাত করে। যুদ্ধরত উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে নির্বিচারে গোলাবর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। ওমদুরমানের ওমবাদা এলাকায় উদ্ধারকারীরা রবিবার জানায়, সেখানে চরম স্বাস্থ্যসংকট চলছে, যেখানে আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়ায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মানবিক সংকট
সোমবারের গোলাবর্ষণ এমন সময় ঘটল, যখন সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে লড়াই সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরো বেড়েছে। তাদের যুদ্ধের ২০ মাস পার হয়েছে। সুদানের সেনাসমর্থিত সরকারের অবস্থান পোর্ট সুদান সোমবার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর কারণ হিসেবে উত্তরাঞ্চলের একটি প্রধান জলবিদ্যুৎ বাঁধে ড্রোন হামলাকে দায়ী করা হয়েছে, যা আধাসামরিক বাহিনীর চালানো বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ড্রোন হামলার আগে সেনাবাহিনী এক বছরের বেশি সময় ধরে আরএসএফের দখলে থাকা আলজাজিরা রাজ্যের রাজধানী ওয়াদ মাদানি পুনর্দখল করে। যুদ্ধ ইতিমধ্যে সুদানের দুর্বল অবকাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
এতে কয়েক লাখ মানুষের প্রাণহানি, এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং অনেককে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) শুক্রবার জানায়, এ বছর সুদানে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩২ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার হতে পারে। গত মাসে জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদানের পাঁচটি এলাকায় ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে দুই কোটি ৪৬ লাখেরও বেশি মানুষ ‘তীব্র খাদ্যসংকটে’ ভুগছে বলে জানিয়েছে আইপিসি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কেবল একটি যুদ্ধবিরতিই দুর্ভিক্ষ আরো ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।’
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct