আপনজন ডেস্ক: বার্সেলোনা ৫ : ২ রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচটা আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধেই। ৫টা গোল হয়ে গেছে ততক্ষণে। প্রথমটা ঢুকেছে বার্সেলোনার জালে, পরের ৪টা খেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটার স্মৃতি তখন উঁকি মারছে। গত বছর অক্টোবরে লা লিগায় সেই ম্যাচে রিয়ালকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল বার্সা।
আজ জেদ্দার ম্যাচটা অবশ্য লিগের ছিল না, ছিল স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনাল। সেই ম্যাচে ৪-১ গোলে এগিয়ে থেকে বার্সা যখন বিরতিতে যাচ্ছে, ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্যও যেন লেখা হয়ে গেছে।
নাটক অবশ্য বিরতির পরেও হলো। বার্সেলোনা ব্যবধান আরও বাড়াল, তারপর আবার রিয়াল সেটা কমাল। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন বার্সা গোলকিপার ভয়চেক সেজনি, শেষের প্রায় ৪০ মিনিট বার্সা খেলল ১০ জন নিয়ে। তবে সুযোগটা নিতে পারল না রিয়াল মাদ্রিদ। জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালটা শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা জিতে নিল ৫-২ গোলে।
এ নিয়ে টানা দুটি এল ক্লাসিকোতে রিয়ালের জালে ৪ বা এর বেশি গোল দিল হান্সি ফ্লিকের দল। সুপার কাপের শিরোপা জিতল রেকর্ড ১৫তম বারের মতো। শুরু থেকেই রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে ব্যস্ত রাখে বার্সেলোনা। চার মিনিটের মধ্যেই কোর্তোয়া দুটি সেভ করেন, দুটি কর্নারের বিনিময়ে। তবে দ্বিতীয় কর্নারের পর হঠাৎ ধাক্কা খায় বার্সা। কর্নার থেকে আসা বল বার্সা মিডফিল্ডার মার্ক কাসাদোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যান রিয়াল ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। একটু এগিয়ে তিনি পেয়ে যান ডানে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে, পাস বাড়ান তাঁর দিকে। সেই পাস ধরে এক দৌড়ে এমবাপ্পে চলে যান বার্সার ডি-বক্সে। তারপর বার্সা ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে তাঁর ডান পায়ে নেওয়া নিচু শট গোলরক্ষক ভয়চেক শেজনিকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় বার্সার জালে। একেবারেই খেলার ধারা বিপরীতে এগিয়ে যায় রিয়াল, ১-০। বার্সা অবশ্য গোল খেয়ে ঝিমিয়ে পড়েনি, বরং আরও বেশি আক্রমণ করতে থাকে। তবে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগ ছিল অটল। বেশিক্ষণ বার্সাকে আটকে রাখতে পারেনি তারা। জুলস কুন্দের কাছ থেকে বল পেয়ে মাঝমাঠে থাকা রবার্ট লেভানডফস্কি প্রথম ছোঁয়াতেই পাঠিয়ে দেন লামিনে ইয়ামালের কাছে। রিয়ালের রক্ষণভাগে ঢুকে ফারলাঁ মেন্দি ও চুয়ামেনিকে কাটিয়ে বাঁ পায়ে দারুণ এক শট নেন, ডান দিকের পোস্ট ঘেঁষে বল চলে যায় রিয়ালের জালে, ১-১। এরপর বার্সেলোনাকে আটকানো মুশকিল হয়ে পড়ে রিয়ালের জন্য। ৩৪ মিনিটে নিজেদের বক্সের ভেতর বলের দখল নিতে গিয়ে বার্সা মিডফিল্ডার গাভিকে ফাউল করে বসেন রিয়াল মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, কামাভিঙ্গা দেখেন হলুদ কার্ড। দুর্দান্ত এক স্পট কিক থেকে ৩৬ মিনিটে বার্সাকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন লেভানডফস্কি। তবে রিয়ালের দুর্ভোগ সেখানেই শেষ হয়নি; ৩৯ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে কুন্দে লম্বা এক পাস বাড়ান রিয়ালের বক্সের দিকে এগোতে থাকা আনমার্ক রাফিনিয়ার দিকে। লাফিয়ে করা দুর্দান্ত এক হেডে ব্যবধান ৩-১ করেন রাফিনিয়া।
বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হওয়ায় প্রথমার্ধে বাড়তি সময় যোগ করা হয় ১০ মিনিটের মতো। রিয়াল চতুর্থ গোলটা খায় সেই যোগ হওয়া সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে। রিয়ালেরই একটা কর্নার থেকে বল পেয়ে গিয়ে পাল্টা আক্রমণে যান লামিয়ে ইয়ামাল এবং দারুণ এক পাস দেন রাফিনিয়াকে। বক্সের কাছাকাছি গিয়ে রাফিনিয়া রিয়াল মিডফিল্ডার ফেদে ভালভার্দেকে নিজের দিকে এনে বল বাড়ান অ্যালেক্স বালদের দিকে। দারুণ এক শটে ৪-১ করেন বালদে। এরপর এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে বিরতির পর অবিশ্বাস্য কিছু করতে হতো রিয়াল মাদ্রিদকে। নাটক অবশ্য বিরতির পরেও কম হয়নি। মাঠে ফেরত আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে রিয়াল ফরোয়ার্ড রদ্রিগোর শট ফিরে আসে বাঁ দিকের পোস্টে লেগে। ঠিক পরের মিনিটেই মার্ক কাসাদোর দারুণ এক পাস থেকে বল পেয়ে রাফিনিয়া এগিয়ে যান রিয়ালের বক্সের দিকে। তারপর আন্তোনিও রুডিগার ও চুয়ামেনিকে কাটিয়ে যে শটটা নেন, সেটা ঠেকানোর সাধ্য ছিল না কোর্তোয়ার, ৫-১। এমবাপ্পেকে ঠেকাতে পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে আসেন বার্সা গোলরক্ষক সেজনি। বক্সের ঠিক বাইরে ফাউল করেন এমবাপ্পেকে। সরাসরি লাল কার্ড দেখান সেজনিকে। ডি-বক্সের সীমানায় ফ্রি-কিক পায় রিয়াল। রদ্রিগোর ফ্রি-কিকে, ব্যবধান কমিয়ে ৫-২ করে রিয়াল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct