আপনজন ডেস্ক: সিরিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করার জন্য সৌদি আরবে মিলিত হয়েছে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকরা। গত মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর এই ইস্যুতে এটিই প্রথম আঞ্চলিক বৈঠক। সৌদি রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শাইবানি শনিবার সন্ধ্যায় রিয়াদে এসে পৌঁছেছেন। এছাড়া বৈঠকে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ইরাক, জর্ডান, লেবানন এবং তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও উপস্থিত থাকবেন। তারা বৈঠকে আঞ্চলিক অবস্থান তুলে ধরবেন।
বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট জন বাস, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিও অংশগ্রহণ করবেন। হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে সিরিয়ার নতুন প্রশাসন দামেস্কে আন্তর্জাতিক তহবিল প্রবাহে সহায়তা করার জন্য পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানোর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিংস কলেজ লন্ডনের প্রভাষক বিশ্লেষক রব গেইস্ট পিনফোল্ড আল জাজিরাকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন এবং ইউরোপীয় দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার অথবা অন্তত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার ক্ষেত্রে এইচটিএস যে দিকে যেতে চায়, সেদিকেই এগোচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে তারা জ্বালানি সরবরাহের জন্য সরকারি খাতের কর্মীদের বেতন দেয়ার মতো বিষয়গুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ছিল গৌণ নিষেধাজ্ঞা, যার অর্থ হলো সিরিয়ার সাথে ব্যবসা করার জন্য কেবল মার্কিন নাগরিক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না। বরং অন্যান্য দেশ বা তৃতীয় পক্ষকেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।’
নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি
বাশার আল আসাদের পতনের পর সোমবার ছয় মাসের জন্য সিরিয়ার শাসকদের সাথে লেনদেনের জন্য নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে মানবিক সহায়তার প্রবাহ সহজ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্স সম্প্রতি সিরিয়ার উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেবল পুরো ব্লক থেকেই আসতে পারে।
ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস রোববার রিয়াদে সাংবাদিকদের বলেছেন, ত্রাণের সম্ভাব্য অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে সেসব নিষেধাজ্ঞা, একটি দেশ গঠনে যা বাধা সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোতে অ্যাক্সেস অন্যতম। জার্মানির বেয়ারবক রোববার বলেছেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ‘গুরুতর অপরাধ’ করা আল-আসাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা উচিত। ৮ ডিসেম্বর কঠোর আক্রমণের মধ্য দিয়ে আল-আসাদকে উৎখাত করা হয়। ওই হামলায় নেতৃত্বদানকারী এইচটিএস একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। তারা আল-শাইবানিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত দিয়েছে। এই বৈঠকে সিরিয়ার নতুন শাসক এবং শীর্ষ পশ্চিমা কর্মকর্তারা প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করবেন। এর নেতৃত্বে থাকবে সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার রোমে সিরিয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইইউর শীর্ষ কূটনীতিকদের একটি বৈঠক এবং ডিসেম্বরে জর্ডানে আয়োজিত একটি ঐতিহাসিক বৈঠকের পর এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আঞ্চলিক নেতারা সিরিয়ার নতুন শাসকদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে তাদের কী করতে হবে, তা নির্দেশ করে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct