এম মেহেদি সানি , কলকাতা, আপনজন: বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘুষ কিংবা কাঠমানি খাওয়ার অভিযোগ নতুন নয় তবে এবার খোদ সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোনেশনের নাম করে চড়া টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। নতুন বছরের শুরুতেই শুরু হয়েছে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর ভর্তি। অভিযোগ পার্কসার্কাস সেভেন পয়েন্ট সংলগ্ন মনোরঞ্জন রায় চৌধুরী রোডের মডার্ন স্কুলে নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ভর্তির ক্ষেত্রে ডোনেশন বাবদ নেওয়া হয় ১৬০০ টাকা সঙ্গে আরও ২০০ টাকা। বছরের শুরুতেই নবম দশম শ্রেণীর ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্রদের থেকে নেওয়া হচ্ছে মোট ১৮০০ টাকা।
গত রবিবার ক্যানিংয়ে দশম শ্রেণির ভর্তি ফি ৫৫০ টাকা, ভ্যান চালক বাবার পক্ষে জোগাড় করতে না পারায় ভর্তি না হতে পেরে ছাত্রী নাসিমা মোল্লার আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনার আবহে মডার্ন স্কুলের বিরুদ্ধে ডোনেশন নেওয়ার অভিযোগ শিক্ষা মহলে সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ওই স্কুলে শতাধিক ছাত্র পড়াশোনা করে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তির ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ২৪০ টাকা, তবে নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি ফি ছাড়াও ১৬০০ টাকা অনুদান বাবদ নেওয়া হয়। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী যদি ন্যূনতম ভর্তি ফি দিতেও অক্ষম হন তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ফ্রিতে ভর্তি নেবে। ছাড় তো দূরের কথা ভর্তি ফি’র পরেও ডোনেশন হিসাবে কেনো এই চড়া টাকা নেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ ব্যাপারে যদিও মুখ খোলেননি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে খবর, ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ১০০ শতাংশ শিক্ষার্থীই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের। পার্কসার্কাস এলাকার ঝুপড়ি, বস্তি, বাঁদর পট্টি, মল্লিক বাজার, লোহাপুল এলাকার অসহায় দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। কথা বলে জানা গিয়েছে, যাদের অনেকেরই ভর্তি হওয়ার ১৮০০ টাকা জোগাড় করতে গিয়ে এখনো বইপত্র কেনা হয়নি। ১৮০০ টাকা দিয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া এক ছাত্রের মা জানান, ‘আমার স্বামী কোনো কাজ করতে পারে না, আমি অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করি, সামান্য বেতন, আত্মীয়দের সহযোগিতায় ছেলেকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করেছি। এখনো বই কিনে দিতে পারিনি।’ অন্য আরেকজন ছাত্রের বাবা বলেন, আমি হার্টের রোগী, বাড়িতে বেশ কয়েক বছর ধরে আমার মা অসুস্থ শয্যাশায়ী, আমি মজুরের কাজ করি, সামান্য টাকা পাই। তবু ছেলেকে তো পড়াশোনা করাতে হবে। এবার নবম শ্রেণীতে উঠলো সরকারি স্কুল, তবুও ১৮০০ টাকা দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করালাম। খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। ছেলের পড়াশোনা কিভাবে চলবে তা নিয়েও আমরা খুবই চিন্তিত।’ এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য মুখ খুলতে চাননি, তবে অভিযোগ নিয়ে বারবার প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘ফোনে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না, সম্ভব হলে একদিন স্কুলে আসুন।’ কলকাতা ডিআই সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেনে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct