নকীবউদ্দিন গাজি ও চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় , সাগর, আপনজন: চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষে দিকে ৬টি মৎস্যজীবীর ট্রলারে কাকদ্বীপ ও নামখানা এলাকার ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের জল সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়ার কারণে বাংলাদেশের নৌ বাহিনীর হাতে ধরা পড়া মৎস্যজীবীদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন ও তাদের পরিবারের সাথে মিলিত হতে আজ দুপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগর ব্লকের গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গাসাগর মেলা সংলগ্ন মাঠে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে প্রথমেই তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে সংবর্ধনা জানান এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, বাংলাদেশের জেলে বেশ কয়েকজন ভারতীয় মৎস্যজীবিকে মারধর করা হয়েছে। প্রথমে মৎস্যজীবীরা তা বলতে চাননি। পরে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন দেখে প্রশ্ন করেন মমতা। তাতেই মৎস্যজীবীরা জানান, তাঁদের কয়েক জনকে মারধর করা হয়েছিল।এ দিন দেশে ফেরা মৎস্যজীবীদের প্রত্যেকের হাতে ১০ হাজার টাকা ও শাল তুলে দেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, এত দিন তাঁরা বাংলাদেশের জেলে ছিলেন। বাড়ি ফিরে তাঁরা যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন, তাই এই আর্থিক সাহায্য।মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ৯৫ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশের জেলে বন্দি ছিলেন। অনেক চেষ্টা করে তাঁদের ফেরত নিয়ে এসেছি। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম।
মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের যে সমস্ত মৎস্যজীবীরা আমাদের এখানে আটকে ছিলেন তাদের ওপর কোন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। কয়েকজন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাদের ঠিকমত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে নজর রাখা হয়েছিল। সুস্থভাবেই তাদের বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শেষে তিনি বলেন, দুমাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে। সেই সময়টা মৎস্যজীবীদের কাছে আর্থিক সংকর দেখা যায়। সেই সংকট যাতে না হয় সেজন্য বাংলায় সমুদ্রসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে দু’মাস মৎস্যজীবীদের ৫০০০ টাকা করে অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার মৎস্য বন্ধু প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ মৎস্যজীবী উপকৃত হবে। যে সমস্ত মৎস্যজীবী মারা যাবে তাদের পরিবারকে দু লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। মধ্যে ২০০ পরিবার এর থেকে উপকৃত হয়েছে। শেষে তিনি মৎস্যজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দয়া করে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভারতীয় জলসীমা অতিক্রম করবেন না। তাতে আপনি ও আপনার পরিবার বিপদে পড়বে। দয়া করে এটা করবেন না। কয়েক মাস পর বাড়িতে ফিরে আসায় খুশি মৎস্যজীবী পরিবারের লোকজনরা। তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে বলেননি। উপস্থিত ছিলেন মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বাপি হালদার, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা, কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টু রাম পাখিরা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নীলিমা মিস্ত্রি বিশাল, সহকারী সভাধিপতি শ্রীমন্ত মালি সহ অন্যান্যরা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct