নকীবউদ্দিন গাজি ও আসিফা লস্কর, সাগর, আপনজন: গঙ্গাসাগর মেলা পরিদর্শন এবং উদ্বোধন করতে এসে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুদিনের গঙ্গসাগর সফরে এসে সোমবার গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্রের ‘সৎ সন্তান’ হিসেবে গণ্য করা এবং এটিকে জাতীয় মেলা ঘোষণা না করা বা তীর্থযাত্রীদের জন্য সেতু নির্মাণ না করার অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার ঘোষণা করার জন্য বারবার কেন্দ্রের কাছে আমরা আবেদন করেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা হিসেবে ঘোষণা করেনি। কুম্ভ মেলার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলার জন্য এক পয়সাও খরচ করে না কেন্দ্র সরকার। গঙ্গাসাগর মেলার সময় পুণ্যার্থীদের যাতায়াত থেকে শুরু করে থাকা খাওয়া সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি কপিলমুনি মন্দিরে পুরোহিতদের কাছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেন, কপিলমুনি মন্দির প্রাঙ্গণের সামনে নদী বাঁধে ভাঙন রোধ করার জন্য উদ্যোগী হোক কপিলমুনি মন্দিরের পুরোহিতরা। তার কারণ গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরে যে পরিমাণ অর্থ প্রণামী হিসাবে পাওয়া যায় সব অর্থই উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
কপিল মুনি আশ্রমে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে গঙ্গাসাগরে কিছুই ছিল না। আমরা জায়গাটির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমি এখানে মহারাজজির সাথে দেখা করেছি। প্রতি বছর, লক্ষ লক্ষ ভক্ত কপিল মুনি আশ্রমে আসেন এবং দান করেন। তবে সমস্ত অনুদান অযোধ্যায় পাঠানো হয় যেখানে তাদের আরও একটি মন্দির রয়েছে। আমি অনুরোধ করেছি, এবার কপিল মুনি আশ্রমের চারপাশে একটি সিমেন্টের জায়গা তৈরি করতে অনুদানের ২৫ শতাংশ তারা দান করুন, যাতে এটি ডুবে না যায়।
রাজ্য সরকারের যেটুকু ক্ষমতা রয়েছে সেটুকু নিয়ে ক্ষমতা দিয়ে নদী ভাঙন রোধ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যদি নদী ভাঙন রোধ করার ক্ষেত্রে কপিলমুনি মন্দিরের পক্ষ থেকে সাহায্য পাওয়া যায় তাহলে কংক্রিটের স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কুম্ভ মেলাতে যাওয়ার জন্য সড়ক ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ট্রেনের ব্যবস্থা। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলায় আসার জন্য এক একজন করে পুণ্যার্থীকে নদী পার হয়ে আসতে হয়। গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার জানানো হয়েছে, কিন্তু কেন্দ্র সরকার তাতে কোন আগ্রহ দেখায়নি। যদিও রাজ্য সরকার গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের জন্য উদ্যোগী হয়েছে। আর কয়েক বছরের মধ্যে গঙ্গাসাগরের সেতু তৈরির কাজ সুসম্পন্ন হবে। গঙ্গাসাগরের সেতু নির্মাণের কাজ সুসম্পন্ন হলে সুন্দরবনবাসীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি উপকৃত হবে গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীরা।
মমতার আরও অভিযোগ, কেন্দ্র গঙ্গাসাগরের দিকে তাকায়ও না, কুম্ভমেলার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে।
মুখ্যমন্ত্রী আমা প্রকাশ করেন, একদিন গঙ্গাসাগর মেলা জাতীয় মেলা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, রাজ্য সরকার এমন একটি সেতুর জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে, যা ভারত সরকারের তৈরি করা উচিত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁর সরকার মুড়ি গঙ্গা নদীর উপর ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণ করবে যাতে মূল ভূখণ্ডকে সাগর দ্বীপের সাথে সংযুক্ত করা যায়, যেখানে বার্ষিক গঙ্গাসাগর মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, চার লেনের সেতুর জন্য একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন প্রস্তুত রয়েছে। রাজ্য নির্মাণের জন্য ১,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে, ইতিমধ্যে দরপত্র জারি করা হয়েছে এবং চার বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৯ থেকে ১৭ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলা এবং মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থিরতা বিবেচনা করে বিভিন্ন সংস্থাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। ১২ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, অতিরিক্ত ওয়াচ টাওয়ার, ২ হাজার ২৫০টি সরকারি বাস, ২৫০টি বেসরকারি বাস, ৯টি বার্জ, ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ ও ২১টি জেটি থাকবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct