আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে স্কুল চাকরির জন্য কয়েক কোটি টাকা নগদ মামলায় শনিবার কলকাতার বিশেষ আদালতে তৃতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি মামলায় সমান্তরাল তদন্ত চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তবে কলকাতার বিশেষ পিএমএলএ আদালতে ইডি-নথিভুক্ত মামলায় চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া বারবার স্থগিত করা হয়েছিল কারণ মামলার প্রধান অভিযুক্ত সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র হাসপাতালে ভর্তির কারণে আদালতে শারীরিকভাবে হাজিরা দিতে ব্যর্থ হন। শনিবার, এই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্র জানিয়েছে, সিবিআই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের অফিস থেকেও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করার অনুমতি পেয়েছে, যা রাজ্য মন্ত্রিসভার যে কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা চার্জশিট আদালতের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার জন্য বাধ্যতামূলক।
সূত্রের খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের সম্মতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলের চাকরি দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই-দায়ের মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে, অবৈধভাবে এক নম্বর দিয়ে ২৬৪ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করায় বঞ্চিত হয়েছেন অন্তত ১৫৮ জন যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। আর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কারচুপির পিছনে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রাইমারি টেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও তার ফল প্রকাশের পর ২০১৭ সালে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়োগ চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের একাংশ প্রশ্ন তোলে বাংলা মাধ্যমের প্রশ্নপত্রকে ঘিরে। পরীক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ ছিল, একটি প্রশ্নের জন্য চারটি বিকল্পের মধ্যে সাধারণত একটি উত্তরই সঠিক বলে গণ্য করা হলেও প্রথম এবং দ্বিতীয় বিকল্প দুটিই ছিল সঠিক। সঙ্গত কারণেই এই উত্তরের মধ্যে কোনও একটি বেছে নিলেই পরীক্ষার্থীদের নম্বর পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তা মানেনি। যারা দ্বিতীয় অপশনটি বেছে নিয়েছেন, শুধুমাত্র তাদেরই নম্বর দেওয়া হয়, যারা প্রথম অপশনটি বেছে নিয়েছিলেন, তাদের জন্য নম্বর বরাদ্দ করেনি পর্ষদ। এ নিয়ে বিতর্ক হলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যারা প্রথম বিকল্পটি বেছে নিয়েছিলেন তাদেরও নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর দ্বিতীয় বিকল্পের ক্ষেত্রে তো আগেই নম্বর দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্তও রাখে পর্ষদ। তবে, সিবিআই সূত্র জানিয়েছে পর্ষদের সিদ্ধান্ত মতো এক নম্বর পাওয়ার কথা ৪২৮ জন পরীক্ষার্থীর। অথচ পর্ষদ মাত্র ২৭০ জনের তালিকা প্রকাশ করে। তাদের মধ্যে চাকরি পান ২৬৪ জন। ফলে ১৫৮ জনকে বঞ্চিত করা হয় যার মধ্যে আর্থিক দুর্নীতি রয়েছে বলে সিবিআই মনে করে।
উল্লেখ্য, এই নিয়োগ মামলার তদন্তে নেমে তদন্তকারী আধিকারিকরা পার্থর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি বাড়ি থেকে বিপুল নগদ টাকা এবং সোনা উদ্ধার করে।
পরে ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইডি আধিকারিকরা পার্থকে গ্রেফতার করেন।
তারপর থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার প্রেসিডেন্সি সেন্ট্রাল কারেকশনাল হোমে বন্দি রয়েছেন। যদিও সম্প্রতি শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে স্কুল-চাকরির জন্য নগদ মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মোট বাজেয়াপ্ত অর্থের পরিমাণ এখনও পর্যন্ত ২৩৯.২৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct