মহবুবুর রহমান, বিশ্বজুড়ে যখন নববর্ষের উল্লাসে সকলের খুশির পারদ চড়ছে, ঠিক তখনই গাঁজায় বছরব্যাপী চলমান ভয়াবহ মানব নিধনযজ্ঞ চরম সীমা অতিক্রম করছে।কতটা বিদঘুটে !!! ইসরায়েলি সন্ত্রাসের তান্ডবে ফিলিস্তিনের গাঁজা উপত্যকায় মানবতা আজ ভূলুন্ঠিত। বছরের পর বছর ধরে এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলছে, আর পৃথিবীজুড়ে মানবতার স্বার্থপর ফেরিওয়ালারা নিঃশব্দে তাদের দায়িত্ব ভুলে গেছেন। আজ বিশ্ব বিবেক কী এক অজানা নীরবতায় স্তব্ধ! ধিক্কার জানাই!
পৃথিবীর চলমান অবস্থা ভাবতে অবাক লাগে! এ যেন এক অশুভ চক্র—মানবতা আজ এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন যে, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষ হয়ে আমরা একে অপরকে হত্যা করছি। হানাহানি , মারামারিতে লিপ্ত সবাই! কখনোই থেমে না থাকার এই সংঘাতের কারণ কি? কোথায় আমাদের মানবিকতা? কেন আমাদের সমাজে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত নয়? এমনকি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। এরা কি আসলেই লজ্জা অনুভব করে না?
একটি দেশের প্রকৃত উন্নতি সেই দেশের সংখ্যালঘুদের সম্পূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর নির্ভর করে। যেই দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ, সেই দেশই সার্থকভাবে উন্নত। তবে আজ দুঃখজনকভাবে বিশ্বের অনেক দেশ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত, সেখানে তাদের কোনো শোক কিংবা দুঃখবোধ নেই। তবুও আজ বিশ্ববাসী যখন শুভ নববর্ষ উদযাপন করছে, তখন গাঁজায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে—এদের জন্য আজও কেউ কথা বলছে না! সবাই যেন অন্ধ!
বিশ্ব নেতাদের অনেকেই এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কেবল নিন্দা জানাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পদক্ষেপের কোনো ইঙ্গিত নেই। ইসরায়েল যে নিষ্ঠুরতার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে, তাতে গাজার ‘কামাল আদওয়ান হাসপাতাল’ ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে বহু মানুষ, চিকিৎসক এবং রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু কোথায় সেই মানবতার ফেরিওয়ালা যারা এ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পর্যন্ত এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ কি রয়েছে? ঐ যুদ্ধ বিদ্ধস্ত অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার শেষ সম্বলটুকুও ইসরাইলী হায়েনাদের দানবিক সন্ত্রাসী আক্রমণে আজ ধ্বংস! অথচ বিশ্ব বিবেক ভাত ঘুমে!!! আফসোস!
আলজাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী, হাসপাতালের অপারেটিং রুম ও জরুরি বিভাগ পুড়ে গেছে এবং প্রায় ৩৫০ জন মানুষকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে, ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে যে, এই হাসপাতালটি হামাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটিই ছিল ছন্নছাড়া, বাস্তুহারা, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আবাল বৃদ্ধ বনিতার একমাত্র চিকিৎসা স্থল।জালেমরা ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে এটাও জ্বালিয়ে দিয়েছে!!! ছিঃ ছিঃ!হাসপাতালের অপব্যবহার করা এক চরম অপরাধ, মানবতার হত্যা !!! প্রশ্ন জাগে,এদের হৃদয়ে কি সামান্যতম মানবতাবোধ নেই ???
বিশ্বের নানা প্রভাবশালী রাষ্ট্রধারীরা এই ঘটনা নিয়ে নিজেদের বিবৃতি দিয়েছে, কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়া মাত্রাতিরিক্ত মৃদু। একটি সুস্থ, মানবিক পৃথিবী গড়ার দায়িত্ব আজ প্রতিটি মানুষের। গাঁজা উপত্যকায়, সিরিয়া, লিবিয়া, লেবানন, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে সংঘাত চলছে—এগুলো নিয়ে আমরা কি সত্যিই যত্নশীল? আমাদের দায়িত্বশীলতাকে আমাদের জীবনধারার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। মানবতার কল্যাণে আমাদের একযোগভাবে কাজ করতে হবে।
আমরা যদি নিজেদের আনন্দের ও জীবনের অহেতুক রঙ্গলীলায় মত্ত হয়ে পৃথিবীর অন্যায়-অপরাধকে গ্রাহ্য করি, প্রতিবাদ না করি, আওয়াজ না তুলি তবে আমাদের মানুষ হিসেবে দাবি নিস্ফল। তবে আমাদের সমূহ আনন্দ ভরা প্রাণবন্ত জীবন ব্যর্থ ও অপদার্থ মূলক। আমরা শুধু আত্মকেন্দ্রিক হলে ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে অন্যায়ের সঙ্গ দিলে আমরা নরাধম। আমাদের কে ভাবতে হবে। আজ গাঁজা উপত্যকাসহ যে কোনো যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষদের সহানুভূতি ও সহায়তা দেওয়ার সময় এসেছে। এর মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেদের দায় পালন করছি না, বরং পৃথিবীকে শান্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
এখন, আমাদের উচিত মানবতার জন্য কাজ করা, পৃথিবীর প্রান্তে যেকোনো নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করা। এই পৃথিবী যদি আমাদের সকলের কল্যাণে এক হয়ে কাজ করে, তবে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গঠন সম্ভব হবে। যদি প্রতিটি মানুষ নিজ ধর্ম ও পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণু হয়, তবে আর কোনো সংঘাত হবে না। আমরা সবাই একে অপরের জন্য, মানবতার জন্য।
শেষে বলতে চাই, “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।”
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct