নিজস্ব প্রতিবেদক , আমডাঙা, আপনজন: আমডাঙা কেন্দ্রীয় সিদ্দিকিয়া হামিদিয়া রাহানা সিনিয়র মাদ্রাসার সরকারি ভবন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়ায় সুপারিনটেনডেন্ট এবং সহকারী সুপারিনটেনডেন্টকে বরখাস্ত করা হলো। গত ২৪শে ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের তরফে জারি হওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী সোমবার ওই মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালন সমিতি সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ সিরাজুল হক মল্লিক এবং সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল হককে দরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি বোর্ডের নির্দেশিকা অনুযায়ী জেলা সংখ্যালঘু আধিকারিক (ডোমা) আমডাঙা কেন্দ্রীয় সিদ্দিকিয়া হামিদিয়া রাহানা সিনিয়র মাদ্রাসার তৎকালীন পরিচালন সমিতির সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মন্ডল সহ সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ সিরাজুল হক মল্লিক এবং সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল হকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে বলে জানা গিয়েছে।
গত ২৪ তারিখ পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের তরফে নির্দেশিকা জারি করে বর্তমান পরিচালন সমিতিকে পাঁচ দিনের মধ্যে সুপারিনটেনডেন্ট এবং সহকারী সুপারিনটেনডেন্টকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সোমবার পরিচালন সমিতির বৈঠক থেকে এই নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে বলে ‘আপনজন’কে জানান মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালন সমিতির সম্পাদক আব্দুর রজ্জাক গাজী। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ সুপারিনটেনডেন্ট এবং সহকারী সুপারিনটেনডেন্টকে বরখাস্ত করেছি। সর্বসম্মতিক্রমে মাদ্রাসা শিক্ষক মোফাজ্জেল হককে টিআইসি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং মাদ্রাসার ভবনটি দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’ বরখাস্ত হওয়া সুপারদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারণে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বোর্ডের নির্দেশে ইতিমধ্যেই প্রধান তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সংখ্যালঘু আধিকারিক (ডোমা)। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ড. আবু তাহের কামরুদ্দীন বলেন, ‘বোর্ড কোনরকম অন্যায়ের সঙ্গে আপোশ করবে না। ভবন লিজের ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপারদের থেকে সন্তোষজনক জবাব মেলেনি। সেজন্যই আমরা এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবং যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান মাদ্রাসা পরিচালন সমিতিকে ওই ভবনটি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য ‘এমএসডিপি’ প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে আমডাঙ্গা উন্নয়ন আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে আমডাঙা কেন্দ্রীয় সিদ্দিকিয়া হামিদিয়া রাহানা সিনিয়র মাদ্রাসায় একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। মাদ্রাসার অদূরে মাদ্রাসারই জমিতে এডিশনাল ক্লাসরুম হিসেবে ওই ভবনটি নির্মাণ হয়। ২০২৩ সালে শুরুতে ওই ভবনটি ২৫ বছরের জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মাদ্রাসার ভবন লিজ দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে মাদ্রাসার অভিভাবকরা ১২ নভেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে লিখিত অভিযোগ করেন। জানা গিয়েছে, লিজের চুক্তিপত্র অনুযায়ী প্রতিমাসে ২৬ হাজার টাকা করে ভাড়ার রফা হয়। প্রথমে ওই বেসরকারি সংস্থা মাদ্রাসাকে চার লক্ষ টাকা দেয় ভবন সংস্কারের জন্য। পাশাপাশি ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা পরিকাঠামগত উন্নয়নের জন্য বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যয় করা হয়। যেটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি বলে মনে করছেন অনেকেই। বিষয়টি জানা মাত্র উত্তর ২৪ পরগনার সংখ্যালঘু বিষয়ক জেলা আধিকারিক (ডোমা) ভবনটি পরিদর্শনে আসেন। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের তরফেও তলব করা হয় সুপারিনটেনডেন্ট এবং সহকারি সুপারিনটেনডেন্টকে। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্তৃপক্ষ সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। ফলে একাধিক শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন দেখার মাদ্রাসার সরকারি ওই ভবনটি কত দিনে খালি হচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct