আপনজন ডেস্ক: ফের ক্ষমতায় ট্রাম্প: বিশ্বে সবচেয়ে সামরিক শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনি প্রচারণায় চলাকালে খেয়েছেন গুলি। কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে ফেরেন তিনি। নির্বাচনি তর্কে নানা সমলোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। তবুও তাঁর জয় ঠেকাতে পারেননি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হেরেছেন কমলা, জিতেছেন ট্রাম্প।
ঋষি সুনাকের পরাজয়
২০২৪ সালে দেশে দেশে ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের পরাজয় দেখেছে বিশ্ব। সে তালিকায় রয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ৫ জুলাই ব্রিটেনের নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়। নজির গড়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কেয়ার স্টারমার। তাঁর দল লেবার পার্টির কাছে ভরাডুবি হয় কনজারভেটিভ পার্টির। প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান ঋষি সুনাক। ১৪ বছর পর টোরি শাসনের অবসান ঘটে রাজার দেশে।
ক্ষমতা পাকাপোক্ত পুতিনের
ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ১৭ মার্চ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় দেশটিতে। পুতিনের ঝুলিতে পড়ে ৮৭.৮ শতাংশ ভোট। ফলে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ফের রাশিয়ার মসনদে বসেন তিনি। টানা পঞ্চমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন পুতিন।
ইরানি প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু
২০২৪ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে বিরোধের জেরে মৃত্যু হয়েছে ইরান ও ইরান সমর্থিত বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শীর্ষনেতাদের। ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর ঘটনাও প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইরানের প্রেসিডেন্ট। একটি পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে যাওয়ার সময় কপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তর-পশ্চিম ইরানের একটি পাহাড়ে আছড়ে পড়ে।
পালালেন বাশার আল আসাদ
২৭ নভেম্বর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়ংকর রূপ নেয়। আল কায়দার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতৃত্বে আলেপ্পো দখল করে নেওয়ার ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা। তারপর একে একে দারা, হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করার পর ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামেস্কো পেঁছে বিদ্রোহীরা। পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
ইউরোপে ডানপন্থিদের উত্থান
সবাইকে চমকে দিয়ে ইউরোপে ডানপন্থি এবং জাতীয়তাবাদী দলগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইউরোপে নির্বাচনগুলোতে ডানপন্থিদের উত্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। ফ্রান্স এবং জার্মানিতে অনাস্থা ভোটে নাস্তানাবুদ হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এই পট পরিবর্তনে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, গোটা ইউরোপে সংহতির অভাব ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা স্পষ্ট হয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা
হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান ইসরায়েলে কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এর জবাবে ইসরায়েলও ইরানের ভূ-খণ্ডে হামলা চালায়। পাল্টাপাল্টি এ হামলায় গোটাবিশ্ব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। বিশ্বনেতারা সতর্ক করেন এভাবে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন মাত্রা
ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়। এটি জানার পরই রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে। বেধে যায় যুদ্ধ। দুই বছর পার হয়েছে এ যুদ্ধের। এখনো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করতে পারেনি রাশিয়া। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ইউক্রেনের সেনারা। এ যুদ্ধে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করে আসছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূ-খণ্ডে হামলা চালায় ইউক্রেন। ক্ষিপ্ত হন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেনাদের বলেন, পরমাণু অস্ত্র তৈরি রাখতে।
লেবাননে ইসরায়েলি হামলা
ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব চরমে পেঁছেছে। গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা থামেনি। ইসরায়েলের লাগাম টেনে ধরতে হামাসের সঙ্গে হুতি বিদ্রোহীরাও যোগ দিয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর পেজার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবানন। সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সদস্যসহ প্রাণ যায় অন্তত ৫০০ জনের। আহতের সংখ্যা ৪ হাজার পেরিয়ে যায়। এ ঘটনার পরদিন থেকেই লেবাননে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি সেনার অভিযানে নিহত হন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ইরানও।
তাইওয়ান, পাকিস্তানে নির্বাচন হাইতি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অস্থিরতা
১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হন লাই চিং তে ওরফে উইলিয়াম লাই। তাঁর এই জয়ে অস্বস্তি বাড়ে চীনের। অভিযোগ ছিল, এ নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ছে বেইজিং। ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পান ইমরানের দল পিটিআই সমর্থিত নির্দলরা। কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে তাঁরা সরকার গঠন করতে পারেননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ। অন্যদিকে মাফিয়াদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে হাইতি। ১৫ মার্চ রাজধানী পর্তোপ্রাঁসের ৮০ শতাংশ দখল করে নেয় বিভিন্ন গ্যাং। ইস্তফা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়াল হেনরি। অস্থিরতা দেখা দেয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করে দেশটির পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টের ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০৪ জন তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন।
চাঙা বিশ্ব অর্থনীতি
করোনায় পৃথিবীর অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। চীনের মতো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশও সে তালিকায় ছিল। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ হানাহানি চললেও অবিশ্বাস্যভাবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। দেশে দেশে লড়াই চললেও বেড়েছে বিনিয়োগ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চমক
২০২৪ সালে প্রযুক্তি খাতে বড় সংযোজন ঘটায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার ছিল এ বছর। চিকিৎসা, শিক্ষা ও নানা ধরনের প্রযুক্তি পণ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দ্রুতগতিতে বেড়েছে। চ্যাটজিপিটির ব্যবহার মানুষকে অবাক করেছে। হাতের মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ঘরের ওয়াশিং মেশিন, বৈদ্যুতিক বাতি সব কিছুতেই যোগ হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়েও আলোচনার ঝড় উঠেছে। নকল ভিডিও ও হুবহু মানুষের কণ্ঠস্বর নকল করার প্রযুক্তি দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
পৃথিবীতে এলো চাঁদের মাটি
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর অদেখা অঞ্চল থেকে মাটি ও পাথর নিয়ে ফিরে এসেছে নভোযান চ্যাংই-৬। এ অনন্য কীর্তি ঘটায় চীন। ২৫ জুন দুপুরে মঙ্গোলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল সিজিওয়াং ব্যানারে অবতরণ করে নভোযান চ্যাংই-৬। চাঁদের যে অংশ থেকে নমুনা আনা হয়েছে তা নিয়ে এখনো অনেক কিছু অজানা। কারণ অঞ্চলটি পৃথিবী থেকে কখনো দেখা যায় না। গত ৩ মে দক্ষিণ চীন থেকে রওনা দেয় মনুষ্যবিহীন নভোযানটি। এরপর ২ জুন এটি সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে। প্রায় দুই দিন ধরে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সবচেয়ে পুরনো এবং বড় গর্ত থেকে মাটি ও পাথর সংগ্রহ করে যানটি।
জাপান ও তাইওয়ানে ভূমিকম্প, বন্যায় ডুবল ব্রাজিল
২০২৪ সালে বেশ বড় কয়েকটি ভূমিকম্প, বন্যা ও টাইফুনের ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও প্রকৃতির কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। ১ জানুয়ারি, ২০২৪। নতুন বছরের প্রথম দিনই জাপানে ৭.৬ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্প হয়। প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ, ক্ষয়ক্ষতিও হয় বিস্তর। ৩ এপ্রিল ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ান। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭.৪। মৃত্যু হয় ১০০ মানুষের, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বড় বড় দালান। বন্যায় সীমাহীন কষ্টের মুখোমুখি হয় ব্রাজিলের জনগণ। ৫ মে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ব্রাজিল। সঙ্গে প্রবল বর্ষণ। মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায় এবং বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন দেড় লাখ মানুষ। প্লাবনে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। গত ৮০ বছরের মধ্যে এটাই ছিল ব্রাজিলের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।
দাবদাহে কাবু বিশ্ব
বিশ্বে উত্তাপ বাড়ছেই। এলোমেলো হয়ে পড়েছে ঋতুবৈচিত্র্য। পৃথিবীর উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৪। বিশ্বে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গবেষকদের কপালে। এ অবস্থার উন্নতি না হলে পৃথিবীতে আগামী বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দাবদাহ আরও ভয়াবহ আকারে বাড়তে থাকবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct