তানজিমা পারভিন, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?’ জাতপাতের ভেদাভেদ। ধর্মের বেড়াজাল। এসবই যে তুচ্ছ তার উজ্জ্বল নিদর্শন হরিশ্চন্দ্রপুরের নসরপুরে উরসের মেলা। পীর হজরত শাহা নুরেলা আসরফ আলি মুকাদ্দোসের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী উরস মেলা ও উৎসব শনিবার থেকে শুরু হল। চলবে রবিবার পর্যন্ত। এবছর ২১ তম বর্ষে পদার্পণ করলো মেলা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বাতাবরণ গড়ে ওঠে এই মেলাকে ঘিরে। মেলার সমস্ত আয়োজন করে থাকেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুদিন আগে নসরপুর গ্রামের বাইরে ফাকা জায়গায় স্থানীয় পাঁচটি পরিবার ঘর করে বসবাস শুরু করেছিলেন। সে সময় চারদিক জঙ্গলে ভর্তি ছিল। মাঝেমধ্যে ঘরগুলো কোনও দুর্যোগ ছাড়াই ভেঙ্গে যেতো। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যেত। এই নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিলো। সে সময়
কোন একদিন চন্ডীপুরের বড় পীর সাহেব গোরুর গাড়ি নিয়ে এই গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় থমকে দাঁড়ায়। স্থানীয় কয়েকজনকে ডেকে এক পীরের কথা জানান। ফাতেহা ও মানত করতে বলেন। সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দা ফুল চাঁদ সিংহ গৌরমোহন সিংহ, ধনিয়া সিংহ ও সরিলাল সিংহরা মাজার করে প্রতি বছর ৯ পৌষ ফাতেহা করত। এরপর ২০০৩ সাল থেকে মেলা করে আসছেন স্থানীয়রা।
উরস কমিটির সম্পাদক নিত্যানন্দ সিংহ বলেন, নসরপুর, কুতুবপুর,ভেলা বাড়ি, রামশিমূল,মাখনা,কুইলপাড় ও গৌরিপুর হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের সহযোগিতায় এই মেলা করে আসছি।
বিশেষ করে হিন্দুরা মেলার সমস্ত আয়োজন করে থাকেন। পীরের মাজারকে কেন্দ্র করে প্রথমদিন কাওয়ালি হয়। দ্বিতীয় দিন ভাওয়াইয়া গান হয়। অনেকেই মানত করে মুরগি ও ছাগল দান করেন। দুই দিন ধরে চলে মেলা। প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়। মালদহ জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী মেলায় আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নিরুপমা দাস বলেন,এই পীর বাবার আমদের অনেক উপকৃত করেছেন। আমি এবছর চাদর ও মুরগি মানত করেছি। উত্তর দিনাজপুর জেলার নগর দীপ দেব শর্মা বলেন,আমি প্রতিবছর পরিবারকে নিয়ে এই মেলায় আসি। এবছর চাদর ও মাটির ঘোড়া মানত করেছি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct