আপনজন ডেস্ক: কারও কাছে ‘মারাকানাজ্জো’র পর সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। কারও কাছে বেলো হরিজন্তের সেই হার মারাকানাজ্জোর চেয়েও মর্মন্তুদ। জাতীয় বিপর্যয়! ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ৭–১ গোলে সেই হারের অপর নাম ‘মিনেইরাচো’—যেহেতু খেলাটা হয়েছিল মিনেইরাও স্টেডিয়ামে। স্কোরলাইন দেখেই নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন কোন সে হার। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে যে হারটা হেরেছিল ব্রাজিল। তারপর থেকে ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের এই স্কোরলাইন যেন ফিরে ফিরে আসে। কখনো মিম হয়ে, কখনোবা অন্য কোনো ম্যাচের স্কোরলাইন এমন হলে, এমনকি কোনো দল ৭ গোল করলে কিংবা হজম করলেও ফিরে আসে ব্রাজিলিয়ানদের সেই হারের প্রসঙ্গ—যা আবার এ দেশের অনেক ফুটবলপ্রেমীর কাছে ‘সেভেন আপ’ নামেও পরিচিত। প্রশ্ন হলো, এখন আবার কী প্রসঙ্গে সেই স্কোরলাইন ফিরিয়ে আনা। সেটাও ওই আগের উদাহরণের মতোই। একজন খেলোয়াড়ের জন্য। অস্কার দস সান্তোস এমবাওবা জুনিয়র। নামের প্রথম শব্দটাতেই আসলে পরিচয়। আচ্ছা, বলুন তো, ব্রাজিলের এই ফুটবলারের নামটা শুনলে সবার আগে কোন স্মৃতিটি উঁকি মারে? ঠিক ধরেছেন। উত্তর লুকিয়ে সেই স্কোরলাইনেই। ব্রাজিলের ৭ গোল হজমের ম্যাচে একটি শোধ করেছিলেন এই অস্কারই।
২০১৬ সালে ব্রাজিল জাতীয় দল ছেড়ে দেওয়া এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে অন্য কারণেও আপনার মনে পড়তে পারে। চেলসিতে দুবার প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন, ইউরোপা লিগও। ঘরের মাঠে সেই বিশ্বকাপের আগের বছর ব্রাজিলের হয়ে জেতেন ফিফা কনফেডারেশনস কাপও। ৩৩ বছর বয়সী অস্কার তাঁর সেরা সময় পেছনে ফেলে এলেও আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন চীনের ঘরোয়া ফুটবলের ক্লাব সাংহাই পোর্ট থেকে ব্রাজিলে ফেরায়। যে সাও পাওলো ক্লাবে তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু, সেখানে প্রায় ১৫ বছর পর ফিরেছেন। গতকাল তাঁকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে দলে ভেড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে সাও পাওলো। অস্কারের নামটি যেহেতু অনেক দিন পর আলোচনায় ফিরে এল এবং তাতে যেহেতু ৭–১ গোলে হারের সেই প্রসঙ্গও অবধারিতভাবেই থাকে—তাই বিষয়টিকে আরও বড় আয়নায় দেখা যাক। আচ্ছা, জার্মানির কাছে ৭–১ গোলে হারের সেই ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে মাঠে নামা খেলোয়াড়দের বর্তমান হালচাল কী? সবাই কি খেলাতেই আছেন নাকি অবসরে? ব্রাজিলে কজন, আর ব্রাজিলের বাইরেই–বা কজন এখনো খেলছেন? তিন বদলিসহ সেই ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে মোট ১৪ খেলোয়াড় মাঠে নেমেছিলেন। অস্কারের কথা তো বলাই হলো। তাঁর দেশে ফেরার পর ব্রাজিলের ২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ম্যাচের আর দুজন খেলোয়াড় দেশের বাইরে রইলেন। গ্রিসের ক্লাব অলিম্পিয়াকোসে খেলছেন উইঙ্গার উইলিয়ান। ডিফেন্ডার দান্তে খেলছেন ফরাসি ক্লাব নিঁসে। বাকিদের মধ্যে কেউ অবসরে। কেউ আবার খেলছেন ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে। ৪৫ বছর বয়সী গোলকিপার হুলিও সিজার যেমন ছয় বছর আগেই অবসর নিয়েছেন। তাঁর শেষ ক্লাব ছিল ফ্লামেঙ্গো। ৪৩ বছর বয়সী রাইটব্যাক মাইকন অবসর নিয়েছেন গত বছর, শেষ ক্লাব ছিল সান ম্যারিনোর ত্রি পেনে। ৩৭ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক দাভিদ লুইজ আপাতত ক্লাবহীন। গত ২২ ডিসেম্বর ফ্লামেঙ্গো জানিয়ে দেয়, তাঁর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে না। ৩৬ বছর বয়সী লেফট ব্যাক মার্সেলোও আপাতত ক্লাবহীন। সর্বশেষ ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের কোচকে চড় মারায় তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে তারা। ৩৭ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লুইস গুস্তাভো এখনো খেলছেন। সাও পাওলোয় তাঁকে সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন অস্কার। ৩৯ বছর বয়সী আরেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফের্নান্দিনিও খেলছেন ব্রাজিলের ক্লাব অ্যাথলেটিকো পারানায়েনেজে। ৩১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার বের্নার্দও ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে। খেলছেন অ্যাথলেটিকো মিনেইরোয়। সেখানে রয়েছেন ১০ বছর আগের সেমিফাইনালে ব্রাজিলের আক্রমণভাগে ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলা ৩৮ বছর বয়সী হাল্ক। আরেক ফরোয়ার্ড ৪১ বছর বয়সী ফ্রেড অবসর নিয়েছেন দুই বছর আগে। সেই সেমিফাইনালে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন উইলিয়ান, রামিরেস ও পলিনিও। উইলিয়ানের দেশের বাইরে খেলার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। ৩৭ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রামিরেস অবসর নিয়েছেন দুই বছর আগে। পলিনিও–ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct