আপনজন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার নতুন প্রশাসন ফের পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করবে। এ বক্তব্যের পর তার সমালোচনা করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো।
ট্রাম্প আসলে ঠিক কী বলেছেন? পানামা খাল কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? রক্ষণশীল গোষ্ঠী টার্নিং পয়েন্টের বার্ষিক আয়োজন আমেরিকা ফেস্টে আলোচনায় পানামা খালকে সামনে আনেন ট্রাম্প। আরিজোনায় অনুষ্ঠিত ওই আয়োজনে তিনি বলেন, ‘পানামা খালে অতিরিক্ত অর্থ রেখে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, যেমন প্রতারণা আমাদের সঙ্গে অন্য সব জায়গায় করা হচ্ছে।’
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘বোকামি করে এটি দিয়ে দিয়েছে’। আমেরিকা ফেস্টের পর তিনি তার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি সংযোগ খালের উপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ওড়া একটি ছবি পোস্ট করেন। তাতে ক্যাপশন দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের খালে স্বাগতম!’ ট্রাম্পের এ বিবৃতির পর বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো।
নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘পানামা খালের প্রতি বর্গ মিটার এবং আশপাশ এলাকা পানামার অধীনে রয়েছে এবং (পানামার) অধীনেই থাকবে।’ এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা সেটা দেখব।’
পানামার নিয়ন্ত্রণ
১৯৭৭ সালে পানামার জাতীয়তাবাদী নেতা ওমর তোরিজোস ও তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বেশকিছু চুক্তিতে সই করেন। চুক্তির শর্ত মেনে ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পানামার কাছে এ খাল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
পানামা খালের দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার বা প্রায় ৫০ মাইল। এটি পরিচালনা করে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ, যা পানামার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।
মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার সংবিধানে এ খালকে ‘পানামা জাতির অবিচ্ছেদ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। তবে এও বলা আছে, পানামা খাল বিশ্বের ‘সব জাতির’ জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সব ধরনের নৌযান, এমনকি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন এ খাল দিয়ে চলাচল করতে পারে। পানামা খাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। খালটি দিয়ে পরিবহন করা ৭৪ শতাংশ পণ্যবাহী কার্গো দেশটির। এরপরই চীনের অবস্থান। দেশটির হিস্যা ২১ শতাংশ।
পণ্যবাহী জাহাজের টোল নির্ধারণ করে পানামা সরকার। খালের প্রয়োজনীয়তা আর আন্তর্জাতিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে টোলের তারতম্য হয়। এছাড়া জাহাজে কার্গো বহনের ধারণক্ষমতা টোল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি নাকচ করে দিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো। গত রোববার তিনি বলেন, ‘খালটির ওপর চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো শক্তিরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’
জাতীয় ইতিহাস
সময়টা ১৯০৩ সাল, কলম্বিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে পানামা। এ ঘটনার সঙ্গেও পানামা খালের সম্পর্ক রয়েছে। ফরাসিরা একটি খাল খননের উদ্যোগ নিলেও সফল হতে পারেনি। এরপর এগিয়ে আসে মার্কিনিরা।
দুই পক্ষের চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, খাল খননের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের জমি ও জলসীমা ছেড়ে দেয় পানামা। ঐতিহাসিক এ অর্জনের কোনো ধরনের উল্টোযাত্রা শুধু আমাদের সংগ্রামকেই অসম্মান জানাবে না; বরং এ অর্জনের সঙ্গে জড়িতদের স্মৃতির প্রতিও অপমান করা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct