সারিউল ইসলাম , মুর্শিদাবাদ, আপনজন: বেলডাঙ্গা কাণ্ডে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের বড় সাফল্য মিলল। গ্রেফতার করা হল ঘটনার মূল মাথা আরএসএসের সক্রিয় সদস্য সায়ন হালদার কে।
চলতি বছর নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ শনিবার সন্ধ্যায় বেলডাঙ্গার একটি পুজো মণ্ডপের লাইট বোর্ডে ভেসে ওঠে ‘আল্লাহ’কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য। সন্ধ্যা ৭:২৫ মিনিট থেকে ৭:৩৫ মিনিট নাগাদ ওই পুজো মন্ডপের আলোকসজ্জার একটি ডিজিটাল চিনা লাইট বোর্ডে কিছু সময়ের জন্য ভেসে ওঠে বিতর্কিত লেখা টি। পুজো কমিটি তৎক্ষণাৎ ডিজিটাল বোর্ডে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু তার মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে সেই লাইট বোর্ডের ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিডিও ভাইরাল হতেই মানুষজন জড়ো হতে থাকে বেলডাঙ্গার ছুতোরপাড়া গণেশতলা এলাকায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে তৎক্ষণাৎ পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই ঘটনার জেরে মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে একটানা ৬ দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখে প্রশাসন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এলাকার যুবক সম্প্রদায় জমায়েত হয়ে অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাতে থাকে। ঘটনায় সন্দেহভাজন পুজো কমিটির চারজন সদস্যকে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অবশ্য তারা জামিনে মুক্ত হন। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। শেষপর্যন্ত ওই ঘটনার মূল মাথা সায়ন হালদার কে গ্রেফতার করল পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘অভিযুক্তকে পাকড়াও করা সহজ কাজ ছিল না। ডিজিটাল বোর্ডটি ছিল একটি চীনা কোম্পানির তৈরি। সেই কোম্পানির এন্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে বোর্ডে লেখা হয় এবং লেখা পরিবর্তন করা যায়। রাজ্য পুলিশের আইটি ডিপার্টমেন্ট বিশেষজ্ঞরা ব্যর্থ হলে প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ করা হয় সেই ডিজিটাল বোর্ডের প্রস্তুতকারক চিনা সংস্থাটির সঙ্গে। দিল্লি থেকে তাদের প্রযুক্তিবিদ কে পাঠায় ওই সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা এসে ঘটনার দিন পর্যন্ত কবে কখন কোন ডিভাইস থেকে লাইটটি অপারেট করা হয়েছিল সেই তথ্য উদ্ধার করেন। সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখার পর জানা যায়, ১৬ই নভেম্বর সন্ধ্যে ৭:২৫ থেকে ৭:৩৫ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সায়ন তার মোবাইল থেকে অপারেট করছিল লাইট বোর্ডটি।’
সূত্রের খবর, ২০ বছর বয়সী সায়ন হালদার কৃষ্ণনগর পলিটেকনিক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি বেলডাঙ্গা থানার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। কোন পদে না থাকলেও বিজেপির কট্টর সমর্থক এবং নরেন্দ্র মোদির ভক্ত ছিল সায়ন। এমনকি বেলডাঙ্গার ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহারাজ স্বামী প্রদীপ্তানন্দ ওরফে কার্তিক মহারাজের অনুগামী এই সায়ন। সায়ন আরএসএসের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, সংবাদমাধ্যমের নানারকম অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে।
কৃষ্ণনগর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র সায়ন হালদার টেকনিক্যাল বিষয়ে যথেষ্ট পারদর্শী ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সায়ন এই ঘটনা ঘটাবার সময় নিজের মোবাইল ফ্লাইট মোডে রেখে ওয়াইফাই ব্যবহার করেছিল। বহু চেষ্টার পর মোবাইলের আইপি অ্যাড্রেস শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এরপর সিমের অনুসন্ধান করে অভিযুক্তের পরিচয় বের করে পুলিশ। ধৃতের কাছ থেকে মোট পাঁচটি সিমকার্ড উদ্ধার করে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হলেও বাংলায় প্রথমবার এধরনের ঘটনায় সফলতা পেল পুলিশ। এর আগেও মহারাষ্ট্রে ডিজিটাল লাইট বোর্ডে লেখা পরিবর্তন করায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই ঘটনা বাংলায় প্রথম এবং সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয়।
সায়নের পেছনে বড় কোন মাথা ছিল কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। সমগ্র বিষয়টা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct