বাংলার আবাস যোজনায় কারা বাড়ি পাবেন তার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে। বহু গরীব ও অসহায় মানুষের তালিকায় নাম নেই তেমনি অসংখ্য আবাস যোজনা পাওয়ার উপযুক্ত মানুষের নাম রয়েছে। কিন্তু মুশকিল হল, এমন বহু নেতা-নেত্রী ও তার আত্মীয়-স্বজনের নাম রয়েছে যারা কয়েক দশক পূর্ব থেকে পাকা বাড়িতে বসবাস করছে ও গাড়ি চড়ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন, সরকার প্রহরী হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে তাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো? লিখেছেন ড.মুহাম্মদ ইসমাইল...
বাংলার আবাস যোজনা মুখ্যমন্ত্রীর এক মানবীয় পদক্ষেপ ও প্রতিশ্রুতি মতো বাংলার আবাস যোজনায় কারা বাড়ি পাবেন তার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে। বহু গরীব ও অসহায় মানুষের তালিকায় নাম নেই তেমনি অসংখ্য আবাস যোজনা পাওয়ার উপযুক্ত মানুষের নাম রয়েছে। কিন্তু মুশকিল হল, এমন বহু নেতা-নেত্রী ও তার আত্মীয়-স্বজনের নাম রয়েছে যারা কয়েক দশক পূর্ব থেকে পাকা বাড়িতে বসবাস করছে ও গাড়ি চড়ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন, সরকার প্রহরী হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে তাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো? তার জন্য আমাদের পর্যালোচনা দরকার সরকারি নির্দেশনা ও শর্তাবলি। অর্থাৎ সরকারের নিয়ম অনুসারে কে বা কারা সরকারি আবাস যোজনার মাধ্যমে পাওয়ার কথা তা খতিয়ে দেখা। সরকারি আধিকারিকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি অ্যাপের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে ও মোট ১১ দফা শর্তের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা নির্ধারণ করেছেন। সরকারি নির্দেশনায় তিন শ্রেণীর উপভোক্তা বাড়ি পাবেন যাদের নাম ২০১৭-১৮ সালের সার্ভে অনুসারে ওয়েটিং লিস্ট নাম আছে। দ্বিতীয়ত যে সমস্ত আবেদনকারী সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে বাড়ির জন্য আবেদন করেছেন এবং তৃতীয়ত যাদের বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। তবে তার সাথে বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে সরকারি আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নেবেন ১১ দফা শর্তাবলী বিচার করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সরকারের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তথ্য না থাকার কারণে বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য যাদের সার্ভের জন্য পাঠানো হয় তারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষের মাধ্যমে ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপে নয় ছয় করেন। শুধু তাই নয়, তারা গরিব ও অসহায় মানুষদের গুরুত্ব না দিয়ে নেতাদের আঙুল হেলানই ইচ্ছেমতো পার্টির অনুগত ভোটারদের পক্ষপাত গ্রহণ করেন। ঘুষের বিনিময়ে বহু ধনী ও বিত্তবান ব্যক্তিরা তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেন। শুধু তাই নয় ২০১৭-১৮ সালে ওয়েটিং লিস্টে বহু লোকের নাম ছিল কিন্তু বর্তমানে তাদের অবস্থার উন্নতি হওয়ার কারণে অনেকে তালিকা থেকে বাদ পড়েন। অনেকেই নেতা ও আধিকারিকদের সাথে বোঝাপড়া করে নাম তালিকাভুক্ত করেন। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বঞ্চিতরা। বর্তমান অবস্থা একই থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত বঞ্চিতরা কেন আবাস যোজনা পেলনা। তবে যাদের নাম তালিকাভুক্ত ছিল ওয়েটিং লিস্টে, তারা কি করে তালিকাভুক্ত হলো চূড়ান্ত তালিকায়। তারা প্রধানত দ্বিতীয় শ্রেণীর শর্তাবলি হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে মিথ্যা বলে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেন এবং এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নেতা-নেত্রীদের আত্মীয়-স্বজনের ছত্রছায়ায় থাকায় ও উচ্চ বৃত্তের পরিমণ্ডলে থাকাই সকলেই তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। তবে সমষ্টি উন্নয়নের অধিকরণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে গোলযোগ তালিকা তৈরিতে। এমনকি একটি গ্রামে সার্ভের জন্য একাধিক কর্মচারী নিযুক্ত করেন এবং তারা নিজেদের মতো করে বহু মানুষের তালিকায় নাম তুলেন। নিযুক্ত আধিকারিকদের বক্তব্য অনুসারে এক অপরের সাথে কোনও যোগাযোগ ছিল না। তার ফলে অসৎ সুবিধাবাদীরা সুযোগ নিয়ে একই বাড়িতে একাধিকবার ফটো তুলেন নিজের বাড়ির পরিচয় দিয়ে। যদিও অনেকাংশে আধিকারিকেরা নেতাদের ঘুষের বিনিময়ে একই বাড়ির ছবি কয়েকজন ব্যবহার করে নানা কোনে তুলেন। তার ফলে দেখা যাচ্ছে, অন্যের বাড়ির ফটো তুলে বহু পরিবার আবাস যোজনা পেয়েছে। অপরপক্ষে প্রকৃত বাড়ির মালিকের নাম বাদ পড়েছে চূড়ান্ত তালিকা থেকে। একজনের বয়ান অনুসারে স্থানীয় নেতা ও যুক্ত আধিকারিকের পরামর্শে তার বাড়ির মালিক হিসাবে দেখানো হয় চারজনকে। কিন্তু তার মধ্যে থেকে দুইজনের নাম চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পায় এবং প্রকৃত মালিকের নাম বাদ পড়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে বিডিওর সাথে যোগাযোগ করে কোন ফল হয়নি। এছাড়া এমন লোকের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে যারা ভাবতেই পারছেন না, কীভাবে তাদের নাম তালিকাভুক্ত হলো?তাই অনেকেই সরকারি অফিসে গিয়ে ফেরত দেওয়ার আবেদন করেছেন। এবার আসা যাক সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এমন গন্ডগোল হলো তা জেনে নেওয়া যাক। তার অন্যতম কারণ মৌখিক ভাবে দেওয়া নির্দেশনা, যেখানে বলা হয়, যে সমস্ত বাড়ির পাকা দেওয়াল ও কাচা ছাদ আছে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে হবে। কিন্তু লিখিত নির্দেশনায় বলা হয় পাকা দেওয়াল বা ছাদ থাকলে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কিন্তু আধিকারিকদের নির্দেশনায় বলা হয় পাকা দেওয়াল বা কাচা ছাদ, ছাদ পাকা ও দেওয়াল খাঁচা থাকলে তাদের নাম বিবেচনা করা যাবে। এই নির্দেশনার ফলে বহু আধিকারিক পাকা দেওয়ালের বাড়ি তালিকাভুক্ত করেন ও বহু অধিকারীক বাদ দিয়ে দেন। তার ফলে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, যাদের পাকা বাড়ি আছে তাদের নাম ও অন্তর্ভুক্ত করা হয় সরকারি নির্দেশনা কে বুড়ো আঙুল দিয়ে মিথ্যে তথ্য পরিবেশন করে। বহু প্রভাবশালীদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছে। বহু পরিবারে চাকরি থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম রয়েছে ও অপরপক্ষে জমির পরিমাণ ২.৫ একরের বেশি থাকা সত্ত্বেও নাম রয়েছে। তার অন্যতম কারণ, সরকারের কাছে পারিবারিক হিসাব নেই এবং কার কাছে কি আছে তা তথ্য নেই সরকারের কাছে। কিন্তু গরিব ও অসহায় মানুষের প্রশ্ন- তাদের কোন আপত্তি বা দেখার বিষয় নয়, কোনো বড়লোক ও নেতার আত্মীয়স্বজন পেল- না পেলনা বাংলার আবাস যোজনা। তারা হতদরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও তাদের নাম তালিকা থেকে কীভাবে বাদ পড়ল। তাই বিডিও অফিস থেকে নানা সরকারি অফিস এবং নেতা নেত্রীদের কাকুতি মিনতি করছেন ও শেষ আর্জি জানাচ্ছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আবেদনপত্র গ্রহণ করলেও জমা নেওয়ার প্রমাণ দিচ্ছেন না এবং সরকারি তরফে কোনো আশ্বাসও পাচ্ছেন না। তাদের প্রশ্ন কতটা দরিদ্র হলে তারা আবাস যোজনা পাবেন। শুধু তাই নয়, বহু লোকের মতে ২০১৭-১৮ সালের পর আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে নানা প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক কারণে। বহু মানুষের বাড়ি- ঘর নানা কারণে নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। তার ফলে বহু মানুষ তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। তাই ২০১৭-১৮ সালের তালিকার সাথে বর্তমান অবস্থার মিল নেই। তা জেনেও এত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রূপায়ণের জন্য সরকার কেন এত পুরোনো তালিকা অনুযায়ী প্রকল্প রূপায়ন করার সিদ্ধান্ত নিলেন? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তালিকা, স্কলারশিপ এবং নানা প্রকল্পের দায়িত্বভার আজকাল শিক্ষকদের দিলেও আবাস তালিকার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রূপায়নে শিক্ষকদের যুক্ত করা হলো না কেন? শিক্ষকদের দায়িত্ব দিলে গরিব মানুষদের সাথে বঞ্চনা হতোনা এবং নেতা-নেত্রীদের আত্মীয়-স্বজনেরা এই প্রকল্পে নয় ছয় করতে পারত না আধিকারিকদের সাথে মিলেমিশে। এছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুসারে আবেদনকারী একটা মূচলেখা জমা করেছেন এবং তারা স্বীকার করেছেন তাদের কোন পাকা বাড়ি নেই ও ১১ দফা শর্ত অনুসারে তারা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য। সেখানে পরিষ্কার লেখা ছিল মিথ্যা তথ্য দিলে আইনত অপরাধী থাকব। তবে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। তার ফলে একদিকে যেমন জনগণ সচেতন হবে অপরপক্ষে আধিকারিকেরা যেভাবে দুর্নীতি করে সরকারকে কালিমালিপ্ত করছেন তা অনেকটা কম হবে। তবে সবটাই নির্ভর করছে সরকারের ইচ্ছে ও অনিচ্ছের উপর। তাই সকলেই চেয়ে আছে মানবীয় মুখ্যমন্ত্রীর আদেশের অপেক্ষায়। কারণ সকলেই বিশ্বাস করেন এমন দুর্নীতির বেড়াজালের একমাত্র রাশ টানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়া।
*** মতামত লেখকের নিজস্ব
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct