আপনজন ডেস্ক: সিরিজের মাঝপথে অবসরের ঘোষণা দেওয়াকে ভারতীয় গ্রেটরা কি তাহলে ট্রেন্ড বানিয়ে ফেললেন?২০০৮ সালে সিরিজের মাঝপথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন অনিল কুম্বলে। একইভাবে ২০১৪ সালে টেস্ট ছাড়ার ঘোষণা দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। গতকাল রবিচন্দ্রন অশ্বিনও ভারতের জার্সি চিরতরে তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাকতালীয়ভাবে তিনজনই অবসর নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির তৃতীয় টেস্ট শেষে! কাল ব্রিসবেনে তৃতীয় টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান অশ্বিন। টিম হোটেলে ফেরার পর তাঁকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল ভারতীয় দলের। নৈশভোজের আয়োজনও করার কথা ছিল। কিন্তু অশ্বিন তা চাননি। গতকালই সদ্য সাবেক সতীর্থদের ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন কিংবদন্তিতুল্য এই অফ স্পিনার। আজ সকালে পৌঁছান জন্মশহর চেন্নাইয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে তাঁকে বরণ করে নেন স্ত্রী প্রীতি নারায়ণন এবং দুই কন্যাসন্তান আখিরা ও আধিরা।বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বাড়িতে যান অশ্বিন। বাড়িতে পৌঁছালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অশ্বিন গাড়ি থেকে নামার পর বাড়ির গেটের কাছে যেতেই তাঁর বাবা রবিচন্দ্রন গালে চুমু দেন, মা চিত্রা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। মিডিয়াম পেসার হিসেবে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করা অশ্বিন পরবর্তী সময়ে মায়ের চাওয়াতেই হয়েছিলেন স্পিনার। বাড়িতে ঢোকার আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশীরা ফুলের মালা দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন এবং অটোগ্রাফ দেন অশ্বিন। বাড়িতে ঢোকার আগমুহূর্তে বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে কথা বলেন অশ্বিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই উইকেটশিকারি জানান, তাঁর খেলোয়াড়ি অধ্যায় এখনো শেষ হয়ে যায়নি, ‘আমি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে (২০২৫ আইপিএলে) খেলতে যাচ্ছি। যত দিন পারি, খেলার চেষ্টা করব। আমি মনে করি না ক্রিকেটার অশ্বিন শেষ হয়ে গেছে। অশ্বিন শুধু ভারতের হয়ে খেলবে না।’ অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল কি না, এমন প্রশ্নে অশ্বিনের উত্তর, ‘একদমই নয়। এটা অনেক মানুষের জন্য আবেগের বিষয়। সম্ভবত অনেকে আবেগপ্রবণ হবে, (হতাশায়) নিমজ্জিত হবে। কিন্তু এটা আমার জন্য অনেক বড় স্বস্তির ও সন্তুষ্টির বিষয়। কয়েক দিন ধরেই আমার মাথায় এটা (অবসরভাবনা) চলছিল, খুব সহজাত ব্যাপার ছিল। (ব্রিসবেন টেস্টের) চতুর্থ দিন আমার মনে হয়েছে, এবার সময় হয়েছে এবং পঞ্চম দিনে ঘোষণাটা দিয়ে দিলাম।’ ২০০৮ সালে অনিল কুম্বলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দিল্লি টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বছর। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৯৫৩ উইকেট নিয়ে কুম্বলেই ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। টেস্টেও তাঁর উইকেটসংখ্যা ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ—৬১৯টি। কুম্বলের মতো অশ্বিনও জাতীয় দলকে বিদায় বলেছেন ৩৮ বছর বয়সে।
একই বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও অশ্বিনকে নিয়ে হতাশ কুম্বলে। কারণ, ভারতের এই সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান কোচ চেয়েছিলেন, অশ্বিন উইকেট শিকারে তাঁকে ছাড়িয়ে যাক। ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে কুম্বলে বলেছেন, ‘অসাধারণ ক্যারিয়ারের জন্য তোমাকে অভিনন্দন, অ্যাশ। তুমি ভারতের একজন চ্যাম্পিয়ন বোলার ও চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার (টেস্টে ৬টি সেঞ্চুরিও আছে অশ্বিনের)। তুমি ছিলে সত্যিকারের ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়। ভারতীয় দল অবশ্যই তোমাকে মিস করবে। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে আমি কিছুটা হতাশ। আমি দেখতে চেয়েছিলাম, তুমি ৬১৯ (উইকেট) ছাড়িয়ে যাও। কিন্তু তুমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দিলে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct