নিজস্ব প্রতিবেদক , বর্ধমান, আপনজন: বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার রেজাল্ট সোমবার মধ্য রাতে প্রকাশিত হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণীর জন্য ১৫ টি বিষয়ে মোট ১৫২৫০ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে সংস্কৃত বিষয়ে সফল হয়েছেন বর্ধমান জেলার গলসি থানার শিমুলিয়া গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের কন্যা নাজমা হাসান। সংস্কৃত বিষয়ে সফল ৯৬৮ জনের মধ্যে নাজমার স্থান ৪২৫ তম। নাজমার এই সফলতা অতটা সহজ ছিল না। মাত্র তেরো বছর বয়সে একই দিনে তার দুই অভিভাবক আব্বা ও দাদুকে হারান। কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পড়াশোনা করে আজ তিনি সফল শিক্ষিকা হতে চলেছেন। পরিবারে তার রয়েছে বিধবা মা, বড় ভাই এবং বড় বোন। বড় বোন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাইমারি শিক্ষিকা ২০২১ সালে যোগদান করেছেন এবং বড় দাদা ড. সেখ মহম্মদ হাফিজুর ও বিহার সরকারের শিক্ষক হিসেবে গত বছর নিযুক্তি পেয়েছেন। এর আগে তিনি বিহার সরকারের কলেজে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নাজমার পড়াশোনা পুরোটাই সরকারি বিদ্যালয়ে। গ্রামের প্রাথমিক স্কুল থেকে পাশ করে গলসি সারদা বিদ্যাপিঠ থেকে দশম শ্রেণীর প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে গলসি হাই স্কুলে কলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে গলসি কলেজে সংস্কৃত বিষয়ে অনার্স নিয়ে সেখানেও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ভর্তি হন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর ও বিএড কমপ্লিট করেন প্রথম বিভাগে। কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের সেট এবং কেন্দ্র সরকারের নেটও কোয়ালিফাই করেন। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য চেষ্টা করেও সুযোগ না পেয়ে এবার পারি দেন ভিন রাজ্য বিহারে। সেখানে প্রথম বারের প্রচেষ্টায় ললিত নারায়ণ মিথিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজে নিযুক্ত হন। বর্তমানে নাজমা সেখানেই গবেষণারত এবং এবার সফল হলেন শিক্ষিকা হিসাবে। তার একমাত্র লক্ষ্য কলেজের অধ্যাপক পদে সফলতা। পরিবার সূত্রে তার দাদা বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ড. সেখ মহম্মদ হাফিজুর বলেন, অল্প বয়সেই আমরা অভিভাবকদের হারিয়েছি। লড়াই সহজ ছিল না। আল্লাহর অশেষ রহমতে আর মায়ের দোওয়ায় আজ তিন ভাই বোনই সফল। তবে আক্ষেপ দশ বছর থেকে রাজ্য সরকারের নিয়োগের অভাবে আমারা ভিন রাজ্যে কর্ম করতে যেতে বাধ্য হয়েছি। দু-দু বার ইন্টারভিউ দিয়ে আপারে আজ আমি অপেক্ষামান তালিকায়। ধন্যবাদ বিহার সরকারকে আমাদের পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য। “ নাজমার মা হানুফা বেগম অশ্রুজল নয়নে বলেন, “এই দিনটা দেখার জন্য আমি অনেক কেঁদেছি আজ সফলতার দিনে তোদের আব্বা, দাদু-দাদি, নানা-নানি কেউ নেই তোরা মানুষের মত মানুষ হ।” নাজমা বলেন “আজ আমি যে সফলতা লাভ করেছি তার জন্য সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাই সৃষ্টিকর্তাকে এবং সাথে আমার মা-আব্বাকে। যদিও বাবার স্নেহ ভালবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য বেশিদিন হয়নি কিন্তু খুব ছোটবেলাতেই উনি যে শিক্ষার বীজ আমাদের মধ্যে বপন করে দিয়ে গেছেন তার জন্যই আজ এই জায়গায়। সাথে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার শিক্ষক শিক্ষিকাদের যাদের কাছ থেকে আমি এই শিক্ষা লাভ করেছি। সবশেষে যে মানুষটার কথা বললেই নয় তিনি আমার বড় ভাই যে সমস্ত সফলতা এবং বিফলতায় পাশে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আমাকে উৎসাহ দিয়ে গেছে। এছাড়া আছেন বাড়ির বড়রা যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct