সারিউল ইসলাম , মুর্শিদাবাদ, আপনজন: চলতি বছরে শুরুর দিকে মুর্শিদাবাদ পৌরসভার ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থ তছরুপের অভিযোগে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ মন্ডল। তিনি ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যাপকহারে দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থ তছরুপের অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন। অভিযোগ, গ্রীন সিটি, রাস্তা নির্মাণ, আবাস যোজনা, নিকাশি নালা, পার্কিং জোন তৈরির নামে অর্থ বরাদ্দ হলেও কোন কাজ করা হয়নি। হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দেয়। এবং একইসঙ্গে রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের ডিএলবি অর্থাৎ ডাইরেক্টর অব লোকাল বডিস’স কে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। মাস দু’য়েক আগে সেই তদন্ত করেছিল ডিএলবি। তদন্তের পর ডিএলবি আদালতে রিপোর্ট জমা করে। আদালত ডিএলবি মারফত পৌরসভাকে নির্দেশ দেয় পৌরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলর যাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সেই মতো গত নভেম্বরের ২৫ তারিখ পৌরসভার সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অমর মন্ডল কে শোকজ করে পৌরসভা। আদালতে দারস্থ হন তিনি। চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পৌরসভার অ্যাকাউন্টেন্ট দিলীপ দাস, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নীতিশ বিশ্বাস এবং পৌরসভার ক্লার্ক অমিত মুন্সি কে শোকজ করা হয়। পরে শোকজের জবাবি চিঠিতে তারা প্রত্যেকেই প্রাক্তন পৌর বোর্ড এবং পৌরপ্রধানের নাম উল্লেখ করেন। পৌরসভার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, সেই চিঠিতে প্রাক্তন পৌরপিতা বিপ্লব চক্রবর্তীর নাম রয়েছে। ডিএলবি কে সেই রিপোর্ট জমা করে পৌরসভা। গত ১৩ তারিখ ডিএলবি পৌরসভাকে নির্দেশ দেয় অভিযুক্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। সেই মত মঙ্গলবার পৌরসভার বোর্ড অব কাউন্সিলরের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চারজন কর্মীর বিরুদ্ধে। চারজনকে বরখাস্ত করা হয়। তাদের দায়িত্ব বুঝে নেন পৌরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার দেবাশীষ সরকার। তিনি বলেন, ‘পৌর আইন মেনে প্রথমে শোকজ এবং পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই চারটি দপ্তরের দায়িত্ব আমি বুঝে নিয়েছি।’
ঘটনা প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ পৌরসভার পৌরপিতা ইন্দ্রজিৎ ধর বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে পৌর আইন অনুযায়ী চারজনের দায়িত্ব এক্সিকিউটিভ অফিসার বুঝে নিয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কাজ থেকে আপাতত বরখাস্ত করা হল। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশ মত কাজ হবে।’ দুর্নীতির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালে পৌরসভার নির্বাচনে দুর্নীতি মুক্ত স্বচ্ছ পৌর বোর্ড উপহার দেওয়ার কথা বলেছিলাম পৌরবাসীকে। প্রাক্তন পৌর বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। যারা দুর্নীতি এবং আর্থিক তছরুপের সঙ্গে যুক্ত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি চাকরি খোয়ানো পৌরসভার কর্মীরা। তবে লিখিত আকারে পৌরসভায় জমা করা শোকজের উত্তরে তারা জানিয়েছেন, তৎকালীন সময় পৌরপিতা বিপ্লব চক্রবর্তীর মৌখিক নির্দেশে কাজ করেছেন তারা। প্রাক্তন পৌরপিতা বিপ্লব চক্রবর্তী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এখন আমার সঙ্গে পৌরসভার কোন যোগাযোগ নেই। এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তবে শোকজের বিষয়টি পদ্ধতি মেনে হয়নি বলে মনে হয়েছে।’
আগামীতে চাকরি খোয়ানোর এই তালিকা আরও বাড়তে পারে বলে পৌরসভার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct