আপনজন ডেস্ক: ভালো লেংথে ভালো উচ্চতা নেমে আসা একটি বল। ভালো গতির সেই বল ব্যাটসম্যান ডানহাতি হলে বেশির ভাগ সময়ই সুইং করে বেরিয়ে যাবে। ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে কখনো কখনো ভেতরেও ঢুকবে। এই দৃশ্য দেখা গেছে দীর্ঘ ১৭ বছর। যেটির সারাংশ লুকিয়ে এই সংখ্যাগুলোতে—৩৯৪ ম্যাচ, ৩৪,৩১৮ বল, ৭৭৬ আন্তর্জাতিক উইকেট। আজ যেটিতে পর্দা নেমে এল। তার আগে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চস্থ হওয়া আংশিক সাদা এবং রঙিন এই ‘সিনেমা’র নাম দেওয়া যেতে পারে—‘সুইং ইট লাইক সাউদি’!
টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আগেই। কিন্তু আজ জানা গেল, শুধু সাদা নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রঙিন মঞ্চ থেকেও সরে দাঁড়াচ্ছেন টিম সাউদি। হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে সাউদির বিদায়ের মঞ্চও দারুণভাবে সাজিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২৩ রানের জয়। রানের হিসাবে নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। ছয় বছর আগে ক্রাইস্টচার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একই ব্যবধানে জয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সাউদি। এবার বিদায়ী মঞ্চে ওসবের দরকার পড়েনি। চার দিনে শেষ হওয়া এই টেস্টে তিনি এমনিতেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
১০০ ছক্কা, ৪০০ টেস্ট উইকেট, ১০০ ক্যাচ (৮৬টি নিয়েছেন)—এটা হলে খুব ভালো হতো। তবে যা করতে পেরেছি, তাতেই আমি খুশি। টেস্ট শুরুর দিনই গার্ড অব অনার দিয়েছে ইংল্যান্ড দল। আজ ম্যাচ শেষে বিদায়ী সংবর্ধনা শুরুর আগে যা দিয়েছে দুই দল মিলেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে কখনো এত রানে হারেনি ইংল্যান্ড, আবার ২০০৭-২০০৮ মৌসুমে সাউদির অভিষেক সিরিজের পর নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ইংল্যান্ড কখনো সিরিজও জেতেনি। সাউদি-আবেগে এর সবকিছুই অবশ্য চলে গেছে আড়ালে। নিজের হোমগ্রাউন্ডে টেস্টের সঙ্গে ওয়ানডেও ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে সাউদি বলেছেন, ‘অবিশ্বাস্য এক অভিযাত্রার পর এভাবে বিদায় নেওয়াটা দারুণ।’
অবিশ্বাস্য তো বটেই। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে সাউদি চিরকালীন, বিশ্ব ক্রিকেটেও কি নয়! শুধু টেস্টই ধরুন, ১০৭ টেস্টে ৩৯১ উইকেট। টেস্টে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ৪৩১ উইকেট নিয়ে শীর্ষে যিনি—সর্বকালের সেরা অন্যতম অলরাউন্ডার রিচার্ড হ্যাডলিও ছিলেন আজ সেডন পার্কে। সাউদির ক্যারিয়ারে যাঁর প্রত্যক্ষ অবদান আছে। ১৯ বছর বয়সী সাউদির আন্তর্জাতিক অভিষেকের সময় হ্যাডলি নিউজিল্যান্ডের প্রধান নির্বাচক।
বিদায়বেলায় সাউদিকে স্মারক উপহার দিয়ে হ্যাডলি বলেছেন, ‘৪০০ টেস্ট উইকেট নিয়ে শেষ করতে পারলেই শুধু ব্যাপারটা মানানসই হতো টিমের জন্য। এটা তার প্রাপ্য ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলো না।’ সেই আক্ষেপ দ্রুতই মুছে গিয়ে সাউদির অন্য মহিমার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘টিম অবশ্যই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। পরিসংখ্যান ও রেকর্ড ছাড়াও টিমের আরও কিছু বিষয় আছে। মানবিক যেসব বিষয় অনেক সময় দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়। বিশ্বের সব ক্রিকেটারের কাছেই সে খুব সম্মানের পাত্র। মানুষ হিসেবেও সবার পছন্দের।’ অন্য সবার মতো সাউদির চোখেও হ্যাডলি নিউজিল্যান্ডের ‘সর্বকালের সেরা’। তাঁর মুখ থেকে কথাগুলো শুনে সাউদির আবেগাক্রান্ত হওয়ারই কথা। সেই আবেগ সামলে বিদায় নেওয়ার কারণটাও বললেন সাউদি, ‘এখন এই তরুণদের সময়। গত কয়েক বছরে এমন বেশ কয়েকজন উঠে এসেছে।
আমি এখন বসে তাদের দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দেখব।’ চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি এমন কিছু কি আছে? সাউদি এটাও বলেছেন, ‘১০০ ছক্কা, ৪০০ টেস্ট উইকেট, ১০০ ক্যাচ (৮৬টি নিয়েছেন)—এটা হলে খুব ভালো হতো। তবে যা করতে পেরেছি, তাতেই আমি খুশি।’নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ‘সোনালি সময়’-এর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন বিদায়বেলায়। যাতে বড় ভূমিকা নিউজিল্যান্ডের পেসত্রয়ীর—সাউদির সঙ্গে যাতে ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট ও নিল ওয়াগনার।
টেস্ট ক্রিকেট সাউদির কাছে সবকিছুর ওপরে। ২০২১ সালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়টা তাই সাউদির কাছে বিশেষ হয়ে থাকারই কথা। ওই পেসত্রয়ীর যাতে বড় ভূমিকা। ওই দুজনের সঙ্গে সম্পর্কটাও সাউদির কাছে বিশেষ কিছু, ‘ওই দুজনের সঙ্গে খেলা এবং দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা, যা শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি—এটাই হয়তো সবচেয়ে তৃপ্তির।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct