আপনজন ডেস্ক: সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে একটি গণকবরেই অন্তত এক লাখ মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সিরিয়ার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্স এই তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার দামেস্ক থেকে টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির প্রধান মুয়াজ মোস্তফা বলেছেন, দামেস্কের বাইরের ওই গণকবরে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকারের হাতে নিহত কমপক্ষে এক লাখ মানুষের মরদেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, রাজধানী থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরের আল কুতায়ফাহ এলাকায় গণকবরটি অবস্থিত। ওই এলাকায় গত কয়েক বছরে তিনি আরো একই ধরনের অন্তত পাঁচটি গণকবর শনাক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন।
মোস্তফা দাবি করেন, এই পাঁচটি স্থানের বাইরেও আরো গণকবর রয়েছে। এসব গণকবরে শুধু সিরিয়ান নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং অন্যান্য বিদেশিদেরও কবর দেওয়া হয়েছে।
বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। এরপর প্রায় তিন দশক ধরে শক্ত হাতে শাসন করেন সিরিয়া। তবে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভ ও তার দমন পরে পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়। প্রায় ১৩ বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধের সময় আসাদ বাহিনীর হাতে কয়েক লাখ সিরিয়ান নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, রহস্যময় কারাগারে আটকে রেখে নির্যাতন ও গণ মৃত্যুদণ্ডের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর দুই সপ্তাহের কম সময়ের সরকারবিরোধী আন্দোলনে গত ৮ ডিসেম্বর বাশারের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে।
আসাদের সরকারের পতনের পরপরই সিরিয়ায় যান মোস্তফা। আল কুতায়ফাহ গণকবরে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোর নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখান থেকেই রয়টার্সের সাংবাদিকের সঙ্গেও কথা বলেন।
মোস্তফা জানান, আসাদের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ সামরিক হাসপাতালগুলোয় সংগ্রহ করা হতো। পরে সিরিয়ার বিমানবাহিনী সেগুলো গণকবরে নিতো।
মোস্তফার দাবি, ‘আমরা এমন কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলাম, যারা এসব গণকবরে কাজ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তারা হয় নিজেরাই সিরিয়া থেকে পালিয়ে যান। নয়তো আমরা তাদের পালাতে সহায়তা করি।’ তার সংগঠন কবর খননের কাজে বাধ্য বুলডোজার চালকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই বুলডোজার চালকদের কবর খনন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদেরকে মরদেহ গণকবরে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হতো। তারপরে ময়লা দিয়ে ঢেকে ফেলা হতো এসব কবর।
আসাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রমাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব গণকবর অরক্ষিত পড়ে থাকায় উদ্বেগ জানান মোস্তফা। তদন্তের স্বার্থে প্রমাণাদি সংরক্ষণের জন্য এর সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিরিয়ায় জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত কোসাই আলদাহহাক তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেননি। জানুয়ারিতে এই ভূমিকা গ্রহণের সময় আসাদ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বর্তমানে সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct