আপনজন ডেস্ক: অবশেষে ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল পেশ হল ভারতের সংসদে। বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মধ্যে আজ মঙ্গলবার দুটি বিল লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন মেঘাওয়াল। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, আরও আলোচনার জন্য সরকার বিল দুটি যুগ্ম সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠাতে আগ্রহী। বিল দুটি জেপিসিতে পাঠানোর প্রস্তাব আইনমন্ত্রীকে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিরোধীরা ভোট বিভাজনের দাবি জানানোর পরে বিলগুলি পেশ করা হয়েছিল। ইলেকট্রনিক ভোটিং এবং পেপার স্লিপের মাধ্যমে পরবর্তী গণনার পরে, বিলগুলি পক্ষে ২৬৯ জন এবং বিপক্ষে ১৯৮ জন সদস্য নিয়ে উত্থাপন করা হয়েছিল।
এই বিল আইনে পরিণত হলে লোকসভা ও বিধানসভার পাশাপাশি পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও একসঙ্গে করা যাবে। সরকারের যুক্তি, তেমন করা গেলে নির্বাচন ঘিরে বিপুল অর্থ ব্যয় যেমন হবে না, তেমনই সর্বস্তরে উন্নয়নমূলক কাজও ব্যাহত হবে না। আইনমন্ত্রী মঙ্গলবার দুটি বিল পেশ করেন। একটি ১২৯তম সংবিধান সংশোধন বিল, অন্যটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আইন সংশোধন বিল। বিরোধীরা একযোগে এই দুই বিলের বিরোধিতা করেন। তাঁদের বক্তব্য, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোয় আঘাত হানছে ও সাংবিধানিক আদর্শের পরিপন্থী। তা ছাড়া প্রশ্ন উঠেছে বিল পাস হওয়া নিয়েও। সংবিধান সংশোধন বিল পাস করাতে গেলে দুই কক্ষে দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন, যা রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের নেই। তা যখন নেই, তখন কেন সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিজেপির নতুন দুই বন্ধু দল অন্ধ্র প্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি ও মহারাষ্ট্রের শিবসেনা এই বিলে সম্মতি জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও বিরোধীদের ধারণা, বিজেপির শরিক নয় অথচ অতীতে নানাভাবে তাদের মদদ দেওয়া বিজু জনতা দল বা ওয়াইএসআর কংগ্রেসসহ অনেকেই এই বিলে সম্মতি দেবে না। বিরোধিতা হবে আঁচ করেই সরকার তাই আরও আলোচনার জন্য বিল দুটি জেপিসিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে সেই কমিটিতে শাসক দলের সদস্যরাই বেশি থাকবেন। ৯০ দিনের মধ্যে জেপিসিকে বিলসংক্রান্ত চূড়ান্ত রায় জানাতে হবে।
সংবিধান সংশোধন বিল পাস করাতে গেলে সংসদের দুই কক্ষে দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি ছাড়াও দেশের মোট রাজ্যের অর্ধেকের অনুমোদন প্রয়োজন। বিজেপি সেই সমর্থন জোগাড় করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। তবু তারা এই বিল পাস করাতে উদ্যোগী রাজনৈতিক কারণে। নরেন্দ্র মোদি সরকার দেখাতে চায়, দেশের রাজনৈতিক স্থিরতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে কঠিন সংস্কারে তারা কুণ্ঠিত নয়। অবশ্য বিরোধীদের দাবি, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct