সারিউল ইসলাম , মুর্শিদাবাদ, আপনজন: মুর্শিদাবাদকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলেছিল নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। তার নাতি তথা নবাব সুজাউদ্দিন খাঁ এর পুত্র ছিলেন সরফরাজ খাঁ। মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশনের পাশে নাগিনাবাগে তার সমাধি সংস্কার করা হয় ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে। কিন্তু তিন বছরে সংরক্ষণের অভাবে তা আবারও নষ্ট হতে বসেছিল। গত বুধবার অর্থাৎ ১১ই ডিসেম্বর সেই খবর প্রকাশ করে আপনজন। খবর প্রকাশের পর তৎপর হয় স্থানীয় পৌর প্রশাসন। মুর্শিদাবাদ পৌরসভার উদ্যোগে সেই সমাধি সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান পৌরসভার পৌরপিতা ইন্দ্রজিৎ ধর।
১৭৩৯ সালে নবাব সুজাউদ্দিন খাঁ এর মৃত্যুর পর মুর্শিদাবাদের মসনদে বসে তার পুত্র সরফরাজ খাঁ। কিন্তু ১৩ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই চক্রান্তের শিকার হয়ে পৃথিবী ছাড়েন সরফরাজ। মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত তৎকালীন আজিমাবাদের (বর্তমান পাটনা) সুবেদার তথা নবাব সিরাজউদ্দৌলার দাদু আলীবর্দী খাঁ সরফরাজের দূর্বলতা জানতেন। সরফরাজকে জাহাঙ্গীরপুরের (জঙ্গিপুর) ভাগীরথী তীরবর্তী গিরিয়া নামক এক মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আলীবর্দী খাঁ হত্যা করে। ১৭৪০ সালে মুর্শিদাবাদের মসনদে চতুর্থ নবাব হিসেবে বসেন আলিবর্দী খাঁ। গিরিয়ার প্রান্তর থেকে সরফরাজ খাঁ এর মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় মুর্শিদাবাদে। গোপনে তার মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয় নাগিনাবাগ এলাকায়। বর্তমানে মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২০০ মিটার উত্তর দিকে অবস্থিত সরফরাজ খাঁ এর সমাধি মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বাঁধিয়ে পুনর্নির্মাণ উদ্বোধন করা হয়। সংস্কার করা হলেও সংরক্ষণের অভাবে আবারও নষ্ট হতে বসেছিল ওই সমাধি টি। শেষপর্যন্ত মুর্শিদাবাদ পৌরসভার হস্তক্ষেপে সংরক্ষণ এবং দেখভাল করা হবে ওই সমাধি। এই বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পৌরসভার পৌরপিতা ইন্দ্রজিৎ ধর বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর পেয়েছিলাম সমাধিটি সংরক্ষণের অভাবে আবারও হারিয়ে যেতে বসেছে। তৎক্ষণাৎ আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
সমাধির আশেপাশে হওয়া জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে। শহরে আগত পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং সমাধি সংরক্ষণ বা দেখভালের জন্য পৌরসভা নজরদারি চালাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই শহরে ইতিহাস জেগে থাকুক। কারণ আমাদের শহর পর্যটনের উপর নির্ভর করে চলে। শহরে পর্যটক আসে বলেই কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা চলছে। হাজার হাজার পরিবার নির্ভর করে পর্যটনের উপর।
মুর্শিদাবাদ শহর যেহেতু ইতিহাস কেন্দ্রিক পর্যটনে সমৃদ্ধ, তাই আমরা ইতিহাসকে বাঁচাতে এবং ইতিহাস সংরক্ষণ করতে তৎপর হয়েছি। শুধুমাত্র নবাবদের স্মৃতি নয়, পাশাপাশি জমিদার বা রাজাদের বিভিন্ন প্রাসাদ এবং মন্দির সংস্কার করা হচ্ছে। পৌরসভার উদ্যোগে বহু ঐতিহাসিক স্থাপত্য সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সহজে পৌঁছাতে সংস্কার করা হচ্ছে বিভিন্ন রাস্তা।’
সমাধি সংরক্ষণের বিষয়ে মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা সমাধি সংস্কার করেছিলাম। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে সমাধি টি আবারও ধংস হতে বসেছিল। বহুদিন ধরে চাইছিলাম স্থানীয় প্রশাসন উৎসাহী হয়ে সংরক্ষণের জন্য এগিয়ে আসুক। পৌরসভা এগিয়ে এসেছে জেনে খুশি হয়েছি। পৌরপিতাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।’
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদ শহরে অগণিত ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণের অভাবে দিনের পর দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথবা হয়ে যাচ্ছে দখল। ইতিহাস প্রেমীদের চাওয়ার মধ্যে অন্যতম, ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct