আসিফ রনি ও সারিউল ইসলাম, বহরমপুর, আপনজন: বহরমপুর বইমেলায় বাংলাদেশের বই বিক্রি কেন, সেই প্রশ্ন তুলে একদল ‘আরএসএস’ সমর্থক বুকস্টলে ঢুকে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করল বলে অভিযোগ। আরএসএস সমর্থকরা বুক স্টলের সামনে ব্যানারে লেখা ‘এখানে বাংলাদেশের বই পাওয়া যায়’ শীর্ষ ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, স্টলের বাংলাদেশের বই নষ্ট করার চেষ্টা করে। এই ঘটনার ওই সব সমর্থকদের বিরুদ্ধে বুক স্টলের তরফ থেকে এফআইআর করা হযেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
জানা গেছে, এখন বহরমপুরে বইমেলা চলছে । শেষ হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। রবিবার বলে ভিড় ভালই ছিল। প্রায় সব স্টলেই বইপ্রেমিকরা ব্যস্ত ছিলেন কেউ বই ক্রয় করতে, কেউ উল্টে পাল্টে দেখতে। এরই ফাঁকে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। উল্লেখ্য, জেলার বইমেলাতে এবছর কোনও বাংলাদেশি স্টল ছিল না। কিন্তু কলকাতার কিছু প্রকাশনী বাংলাদেশি পুস্তক বিক্রি করছিল। তার মধ্যে একটি বিশ্ব বঙ্গীয় প্রকাশনী। কুড়ি পঁচিশ জন ‘আরএসএস’ সদস্য স্টলে গিয়ে কেন বাংলাদেশের বই তারা বিক্রি করছেন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত বাংলাদেশের বই বিক্রি বন্ধ করার হুমকি দিতে থাকে। সেসময় বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশনীর ব্যানার জোর করে টেনে নামিয়ে পায়ে মাড়িয়ে নিয়ে যায়। সে খবর ক্রমশ পার্শ্ববর্তী স্টলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। নিকটবর্তী ‘তালিম’ প্রকাশনীতেও বই ওলটপাল্ট করে বাংলাদেশের বই সরিয়ে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। উদ্বেগ সৃষ্টি হয় আর এক বাংলাদেশ বইয়ের পরিবেশক প্রকাশনী ‘নয়া উদ্যোগ’-এর কর্মীদের মধ্যেও। হাঙ্গামার খবর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে মেলাজুড়ে। সন্ধ্যার পর তখন ভিড় ঠাসা মেলা প্রাঙ্গণ। খবর যায় পুলিশেও। পুলিশও দ্রুত সেখানে চলেও এলেও তাদের সংখ্যা ছিল খুব কম। তারা যখন এ বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ও স্টল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তখন সেখানে হাজির হন সমাজকর্মী তথা এসডিপিআই রাজ্য সভাপতি তায়েদুল ইসলাম, কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আশফাক আহমেদ, কলকাতা খিদিরপুর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. শামসুল আলম এবং সমাজকর্মী বিশ্বজিৎ প্রামাণিক। তাঁরা বিশ্ব বঙ্গীয় প্রকাশনীতে যান এবং স্টলের কর্মচারীদের কাছে জানতে চান কী ঘটনা ঘটেছে। আসফাক আহমেদ জানান, কর্মচারীরা তাদেরকে জানিয়েছেন, বিক্ষোভককারীরা হুমকি দেয় বাংলাদেশের বই বিক্রি করা যাবে না। ব্যানারে বাংলাদেশের বই পাওয়া যায় কেন লিখেছ বলে তারা ব্যানার খুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তা ছিড়ে দেয়। সেসময় আরএসএস সমর্থকদের সঙ্গে এই সব সমাজকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার সেকেন্ড অফিসার অভিজিৎ ঘোষাল আসেন। পুলিশ সূত্রে দাবি, থাানর অফিসাররা সব শুনে স্টলের কর্মচারীদের আশ্বাস দেন নিশ্চিতে বই বিক্রি করেন। এর পর ওরা আসলে ছবি তুলে রাখুন। আর পুলিশে খবর দিন। গণ্ডগোল করার চেষ্টা করলে গ্ৰেফতার করা হবে। সেখানে অভিজিৎ ঘোষাল পাহারার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। ততক্ষণে আরএসএস বাহিনী রণে ভঙ্গ দেয়। মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যায়। এই সময় তালিম প্রকাশনীর এক কর্মচারী সেকেন্ড অফিসারকে জানান, তাদের স্টলেও ওরা এসেছিল। বই এলোমেলো করে দিয়েছে। বলেছে বাংলাদেশের বই বিক্রি করা যাবে না। বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশনীর কর্মচারী লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এই ঘটনায় আসন্ন কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশি বই বিক্রি করা নিয়ে আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct