এম মেহেদী সানি, আমডাঙা, আপনজন: সরকারি সম্পত্তি বা সরকারি প্রতিষ্ঠান বেদখলের একাধিক উদাহরণ থাকলেও এবার মাদ্রাসার সরকারি ভবন লিজ দেওয়ার অভিযোগ উঠল খোদ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৷ শনিবার রাতে ওই ভবন পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখলেন উত্তর ২৪ পরগনার সংখ্যালঘু বিষয়ক জেলা আধিকারিক (ডোমা), আমডাঙায় যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকরা ৷ অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে ‘ভুল হয়েছে’ বলে সাফাইও দিয়েছেন মাদ্রাসা প্রধান শিক্ষক, সহ প্রধান শিক্ষকরা ৷ জানা গিয়েছে ভবনটি কার্যত বেদখল, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভবন ফেরত চাইতেই মামলাও ঠোকে ওই ভবনের ভাড়াটিয়া সংস্থা অ্যাঞ্জেল ডে স্কুল ট্রাস্ট।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু কেন্দ্রীভূত এলাকার উন্নয়নের ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য মাল্টি সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এমএসডিপি) এর আওতায় ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে আমডাঙ্গা উন্নয়ন আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে আমডাঙা কেন্দ্রীয় সিদ্দিকিয়া হামিদিয়া রাহানা সিনিয়র মাদ্রাসায় একটি ভবন নির্মাণ করা হয় ৷ মাদ্রাসার অদূরে মাদ্রাসারই জমিতে অ্যাডিশনাল ক্লাসরুম হিসেবে ওই ভবনটি নির্মাণ হয় ৷ তবে ২০২৩ সালে শুরুতে কেন ওই ভবন ২৫ বছরের জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ বর্তমানে বেসরকারি ঐ প্রতিষ্ঠান নার্সিং ছাত্রীদের ছাত্রাবাস হিসাবে সরকারি এই ভবন ব্যবহার করছেন। মাদ্রাসার ভবন লিজ দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে মাদ্রাসার অভিভাবকরা ১২ নভেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ, নিজের চুক্তিপত্রে আমডাঙা কেন্দ্রীয় সিদ্দিকিয়া হামিদিয়া রাহানা সিনিয়র মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হক মল্লিক, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার নুরুল হক, মাদ্রাসা পরিচালক সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মন্ডলের স্বাক্ষর রয়েছে ৷ এমনকী ওই চুক্তিপত্র অনুযায়ী প্রতিমাসে ২৬ হাজার টাকা করে ভাড়ার রফা হয় ৷ প্রথমে ওই বেসরকারি সংস্থা মাদ্রাসাকে চার লক্ষ টাকা দেয় ভবন সংস্কারের জন্য ৷ পাশাপাশি ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা পরিকাঠামগত উন্নয়নের জন্য বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যয় করা হয় ৷ তবে এসব কিছু মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষকরা কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন ৷ এ প্রসঙ্গে ‘আপনজন’ প্রতিনিধির তরফে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি ৷ অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার নুরুল হক বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের না জানিয়ে এটা করা ভুল হয়েছে, তবে পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি, প্রধান শিক্ষকের সম্মতিতেই ভবনটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।’
উত্তর ২৪ পরগনার সংখ্যালঘু বিষয়ক জেলা আধিকারিক (ডোমা) শনিবার সন্ধ্যার পর আমডাঙার জয়েন্ট বিডিওকে সঙ্গে নিয়ে ভবনটি পরিদর্শনে আসেন ৷ আপনজন প্রতিনিধির তরফে যোগাযোগ করা হলে ‘ডোমা’ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি, তবে বিষয়টি জেনেছি ৷ তদন্ত করা হচ্ছে, প্রয়োজনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷’ জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস আগে আমডাঙা বিডিওর তরফে ভবনটি বিশেষ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য মাদ্রাসার কাছে যাওয়া হয় ৷ বিডিওর অনুরোধ রাখতে ভবনটি ফেরত চাইতেই বেঁকে বসন ভাড়াটিয়া সংস্থা ৷ ২৫ বছরের লিজে নেওয়া চুক্তিপত্র অনুযায়ী ভবন ফেরত দিতে নারাজ ওই বেসরকারি সংস্থা এরপরে আদালতের দ্বারস্থ হয়। বিষয়টি জানার পর মাদ্রাসার অভিভাবকদের মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, মাদ্রাসা বাঁচাতে তারা প্রশাসনিক দফতরের দ্বারস্থ হন ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct