আপনজন ডেস্ক: জার্মানির এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্বকে একটি গুরুতর মানসিক চাপ হিসেবে অনুভব করছে বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য বীমা সংস্থা টেকনিকার ক্রাংকেনকাসে (টিকে) পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের মধ্যে এই সমস্যা বিশেষভাবে প্রকট। প্রায় ৬০ শতাংশ জার্মান নাগরিক প্রায়ই, মাঝে মাঝে বা খুব কম হলেও নিঃসঙ্গতা অনুভব করে। বার্লিনে বুধবার এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।
এই গবেষণা চলতি বছরের মে মাসে ফোরসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত একটি প্রতিনিধিত্বমূলক টেলিফোনিক জরিপের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে এক হাজার ৪০৩ জন অংশগ্রহণ করেন। এতে দেখা গেছে, তরুণরা নিঃসঙ্গতায় বেশি ভোগেন। ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ বলেছেন, তারা প্রায়ই, মাঝে মাঝে বা খুব কম হলেও নিঃসঙ্গতা বা একাকিত্ব অনুভব করেন। এ ছাড়া এই বয়সের ৩৬ শতাংশ নিঃসঙ্গতাকে খুব বেশি বা বেশ গুরুতর চাপ হিসেবে অনুভব করেন।
তুলনামূলকভাবে ৪০ থেকে ৫৯ বছর ও ৬০ বা তার বেশি বয়সী গোষ্ঠীর মধ্যে এই হার যথাক্রমে ১৯ শতাংশ ও ২১ শতাংশ।
বার্লিনে সংবাদ সম্মেলন করে বুধবার এই জরিপের ফল উপস্থাপনের সময় সমাজবিজ্ঞানী জানোশ শোবিন বলেন, নিঃসঙ্গতা সাধারণত জীবনযাপনের পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত। আর এটি তরুণ বয়সে বেশি ঘটে থাকে। যেমন বাড়ি ছেড়ে যাওয়া, নতুন শহরে স্থানান্তর বা কাজের পরিবর্তন—এসব কারণে নিঃসঙ্গতা অনুভূত হতে পারে।
জরিপে দেখা গেছে, সিঙ্গেল বা অবিবাহিত ব্যক্তিরা সঙ্গী থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় তিন গুণ বেশি নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন। যদিও নিঃসঙ্গতার মাত্রা পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমান। তবে সঙ্গীর উপস্থিতি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অবিবাহিত বা সঙ্গীহীনদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বলেছেন, তারা খুব বেশি বা বেশ গুরুতরভাবে নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। তবে যাদের সঙ্গী আছে—এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই হার মাত্র ২২ শতাংশ।
পুরুষদের জন্য নিঃসঙ্গতা এখনো ট্যাবু
গবেষণায় দেখা গেছে, নিঃসঙ্গতা অনুভবের জন্য শিক্ষার ধাপ, কাজ অথবা কেউ বড় বা ছোট শহরে বাস করছে কি না—এসব কোনো বড় কারণ নয়। একইভাবে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে নিঃসঙ্গতার সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। নিঃসঙ্গতার বড় কারণ বলা হচ্ছে ব্যক্তির সম্পর্ক ও সামাজিকভাবে তার অবস্থানকে। তবে দরিদ্রতা নিঃসঙ্গতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে তরুণ এককদের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। চাকরি হারানো বা সম্পর্কে বিচ্ছেদ বা মৃত্যুজনিত কারণে সঙ্গী হারানোর ফলে সামাজিক সমন্বয় ভেঙে পড়ে, এতে করে নিঃসঙ্গতা বাড়ে।
জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুরুষ যদি নিঃসঙ্গতা বা এরকাকিত্বে ভোগে, তবে সেটি স্বীকার করা তাদের জন্য কঠিন। শুধু ২২ শতাংশ পুরুষ নিঃসঙ্গতার কথা অন্যকে বলে। নারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪০ শতাংশ। পুরুষদের না বলার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো, অন্যদের বোঝা বাড়াতে না চাওয়া। প্রায় ২৯ শতাংশ বলেছে, নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলা তাদের জন্য অস্বস্তিকর। ৯ শতাংশ উল্লেখ করেছে, তাদের এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার সঙ্গে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে পারে।
নিঃসঙ্গতা ও স্বাস্থ্যের সম্পর্ক
নিঃসঙ্গতার কারণে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার বৃদ্ধি ঘটে। যারা নিঃসঙ্গতা অনুভব করেছে, তাদের মধ্যে প্রায় ২৩ শতাংশ তাদের স্বাস্থ্যকে খারাপ বলে মনে করে, যেখানে যারা নিঃসঙ্গ নয় তাদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা বিষণ্নতার মতো সমস্যা নিঃসঙ্গতা বাড়াতে পারে। নিঃসঙ্গতা মানসিক চাপ, ক্লান্তি, উদ্বেগ ও ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
টেকনিকারের বোর্ড চেয়ারম্যান জেন্স বাস বলেন, ‘নিঃসঙ্গতা শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এটি প্রমাণিত হয়েছে।’ তিনি ডিমেনশিয়া সম্পর্কেও উল্লেখ করেন। নিঃসঙ্গ মানুষ পিঠ, পেটের ব্যথা, হাঁপানি ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা বেশি ভোগে। তবে নিঃসঙ্গতা ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা কেন সম্পর্কিত, তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য।
ডয়চে ভেলে রিপোর্ট
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct