আপনজন ডেস্ক: উপাসনাস্থল (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সম্পর্কিত আবেদনের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থনার স্থানের চরিত্র বা মালিকানা নিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের দেওয়ানি আদালত আর কোনো মামলা নিতে বা আদেশ দিতে পারবে না বলে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ বিধান) আইন, আইনটি নিয়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের এক আবেদনের ওপর শুনানিতে এ নির্দেশনা দিয়েছে। আদালত বলেছে, আমাদের কাছে এই নির্দেশ দেওয়া যথার্থ মনে হচ্ছে যে আর কোনো নতুন মামলা গ্রহণ করা বা নতুন কোনো আদেশ দেওয়া যাবে না। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনো দেওয়ানি আদালত ধর্মীয় স্থান নিয়ে বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও আদেশ বা জরিপ করার আদেশ দিতে পারবে না।
বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং মথুরার শাহি ঈদগাহ মসজিদ, সম্ভল জামা মসজিদ সহ ধর্মীয় স্থানগুলির মালিকানাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশের বিভিন্ন আদালতে দায়ের করা কমপক্ষে দশটি পিটিশনকে এই আদেশ কার্যকর করবে। ১৯৯১ সালের আইনে ভারত স্বাধীন হওয়ার দিন, তথা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দেশটিতে যেসব মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদুয়ারাসহ অন্য ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান রয়েছে, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না। ১৯৯১ সালে সংসদে পাস হওয়া এক ঐতিহাসিক আইনে এ কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ আইনকে সম্প্রতি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আইনটি চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে অনেক আবেদনের শুনানি চলছে।
সুপ্রিম কোর্টে ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে বর্তমানে যেসব শুনানি চলছে, সেগুলোর মধ্যে একটির আবেদনকারী বিজেপি সদস্য অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়। ২০২০ সালে দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে আদালত ২০২১ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ জারি করেছিল। পরে এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে আরও কয়েকটি অনুরূপ পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। তবে, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনটি কার্যকর করার জন্য জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের দায়ের করা একটি রিট পিটিশনও আজ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সিপিআই (এম), ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, ডিএমকে এবং আরজেডি সাংসদ মনোজ কুমার ঝা, এনসিপি (শরদ পাওয়ার) বিধায়ক জিতেন্দ্র আওহাদ প্রমুখ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আইনের সুরক্ষা চেয়ে বেশ কয়েকটি হস্তক্ষেপের আবেদন করেছে।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বৃহস্পতিবার উপাসনাস্থল আইন, ১৯৯১ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে এআইএমপিএলবি-র মুখপাত্র ড. এসকিউআর ইলিয়াস শীর্ষ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশকে স্বাগত জানিয়ে জোর দিয়ে বলেন, স্থানীয় আদালতগুলি আবেদনপত্র গ্রহণ করে এবং মসজিদ ও মাজার সম্পর্কিত আদেশ জারি করে উপাসনাস্থল আইনের চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করছে।
এআইএমপিএলবি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু সংগঠন এই মামলায় শরিক রয়েছে। এআইএমপিএলবি আশা প্রকাশ করেছিল যে এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি দেশজুড়ে মসজিদ এবং মাজারগুলিকে লক্ষ্য করে অনৈতিক কার্যকলাপ রোধ করবে। তবে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে এবং অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা ছড়ানোর প্রচেষ্টা বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপাসনাস্থল আইন সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ও ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মামলায় অন্যতম আবেদনকারী জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানি ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের লক্ষ্য এই দেশে শান্তি ও ঐক্য রক্ষা করা। অতীতের অভিযোগের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে আমাদের অবশ্যই একটি অংশীদারিত্বমূলক ভবিষ্যত নির্মাণে মনোনিবেশ করতে হবে যেখানে জাতির অগ্রগতিতে সমস্ত সম্প্রদায়ের সমান অংশগ্রহণ থাকবে।
জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের অপর সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, আশা করা যায় এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশে সাম্প্রদায়িকতা ও অশান্তি ছড়ানো বন্ধ হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই আদালতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে, যদিও এই অন্তর্বর্তীকালীন সিদ্ধান্তটিও অনেক বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, ১৯৯১ সালের আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা পিটিশনগুলির জবাব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আরও চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে আদালত।
উল্লেখ্য, ভারতের স্বাধীনতার সময় বিদ্যমান উপাসনালয়গুলির ধর্মীয় চরিত্র সংরক্ষণের জন্য ১৯৯১ সালে উপাসনাস্থল আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। অযোধ্যার রাম জন্মভূমি ব্যতীত এই আইনটি আদালতকে এই জাতীয় স্থানগুলির চরিত্র নিয়ে বিরোধ গ্রহণ করতে স্পষ্টভাবে নিষেধ করে, যা এই আইন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী ২০১৯ সালের রায়ের ভিত্তি তৈরি করেছিল। যদিও, ধর্মীয় সম্পত্তি সম্পর্কিত চলমান আইনি লড়াইগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে যার মধ্যে রয়েছে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ, মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ, সম্ভলের শাহী জামা মসজিদ এবং রাজস্থানের আজমির দরগাহ। এই মামলাগুলিতে আবেদনকারীরা দাবি করেছেন যে এই মসজিদগুলি প্রাচীন মন্দিরগুলির উপর নির্মিত হয়েছিল, অন্যদিকে মুসলিমরা যুক্তি দেয় যে উপাসনাস্থল আইনে এই জাতীয় মামলাগুলি নিষিদ্ধ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct