সারিউল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: কনকনে শীতের সকালে বাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পঞ্চায়েত অঞ্চলের শেষ প্রান্তে হাজির পঞ্চায়েত প্রধান। পাড়ায় গিয়ে শুনলেন মানুষের অভাব-অভিযোগ। প্রথমবার কোন পঞ্চায়েত প্রধানকে পাড়ায় পেয়ে একপ্রকার অভিযোগের ক্ষোভ উগড়ে দেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ শুনে সমাধানের আশ্বাস দেয় পঞ্চায়েত প্রধান।
ভগবানগোলা-১ ব্লকের মহিষাস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্থ ঘোষপাড়া এলাকায় সোমবার সকাল সকাল উপস্থিত হন ওই পঞ্চায়েতের প্রধান সাব্বির আহমেদ। সেখানেই তাকে পেয়ে নিজেদের অভাব-অভিযোগ জানাতে শুরু করে গ্রামবাসীরা। ঘোষপাড়া, হরিরায়চক এবং স্বপনগড় এলাকায় এদিন সকালে এলাকা পরিদর্শনে যান পঞ্চায়েত প্রধান।
হরিরায়চক গ্রামের বাসিন্দা জুথিকা ভাস্কর বলেন, ‘এর আগে কোন পঞ্চায়েত প্রধান এখানে আসেনি। আজ পঞ্চায়েত প্রধানকে সামনে পেয়ে আমরা নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরেছিলাম।’ স্থানীয় বাসিন্দা ওবিদন বিবি বলেন, ‘আমাদের অভিযোগ ডাইরিতে লিখে নিয়ে গেলেন প্রধান। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। প্রথমবার কোন প্রধান পাড়ায় এসেছে দেখে পুরনো ক্ষোভ, অভাব-অভিযোগ তার সামনে পেশ করেছি আমরা। আশা করি আমাদের এলাকার সমস্যার সমাধান হবে।’ অন্যদিকে এবিষয়ে ভগবানগোলার বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী তারিফ মহলদার বলেন, ‘পঞ্চায়েত প্রধানের প্রতিটি পাড়ায় গিয়ে কাজ করা দেখে আমি নামকরণ করেছি ‘দুয়ারে প্রধান’। প্রধান এভাবেই আগামী দিনে মানুষের সমস্যা শুনে সমাধান করবে বলে আশা করছি।’
পঞ্চায়েত প্রধান সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমার পঞ্চায়েতে কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামসভা রয়েছে। তার আগে প্রতিটি পাড়ায় গিয়ে সেখানকার মানুষের কি কি চাওয়া-পাওয়া সবকিছু জেনে লিখে রাখছি। পঞ্চায়েতের যতটুকু সম্ভব ততটুকু করার পরেও বাকি চাহিদাগুলো সাংসদ তহবিল, বিধায়ক তহবিল, জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে পূরণের চেষ্টা করবো। প্রতিটি পাড়ায় গিয়ে মানুষের অভাব অভিযোগ শুনছি। কারণ, মানুষ যদি তাদের চাহিদা প্রকাশ না করে তাহলে আমাদের কাজের খামতি থেকে যাবে। সেই কারণে আমার পঞ্চায়েতের অধীনস্থ ৩০টি গ্রামের মধ্যে প্রতিদিন একটি দুটি অথবা তিনটি গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষের দাবিগুলো শুনছি। কারণ গ্রামসভায় গ্রামের সকল মানুষ উপস্থিত হতে পারেন না। সেখানে নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করা সম্ভব হয় না। তাই আমি নিজেই গ্রামসভার আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের দাবী দাওয়ার তালিকা সংগ্রহ করছি।’ সাব্বির আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক আলোচনা অথবা পাড়ার যেকোনো সমস্যা চায়ের দোকানে চর্চা হয়। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন পাড়াতে অভিযোগ শুনতে যাওয়ার মাঝেই চায়ের দোকানে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ‘চায়ের আড্ডা’ করছি।’
ইতিমধ্যে প্রায় ১৬টি গ্রামে ঘুরে অভাব-অভিযোগ সংগ্রহ করা হয়ে গিয়েছে প্রধানের। প্রধানের এই স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিরোধীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct