আপনজন ডেস্ক: গত বছরের সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৪৪ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
সম্প্রতি হামাস এই যুদ্ধের ইতি টানতে চাইলেও এক বিশেষ শঙ্কায় ইসরায়েল তা চাচ্ছে না। কারণ হামলা বন্ধের পরিণতি কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়াতায় রয়েছে ইসরায়েল।
জেরুজালেমে এক প্রেস কনফারেন্সে নেতানিয়াহু বলেন, দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে। এ অবস্থায় যদি যুদ্ধ বন্ধ করা হয়, তাহলে হামাস পুনরায় গাজা দখল করবে এবং আমাদের ওপর হামলা চালাবে। সুতরাং আমরা তাদের আর ফিরতে দিতে পারি না।
নেতানিয়াহু ফের বলেছেন, তিনি হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে চান, যাতে ভবিষ্যতে ইসরায়েলে আর হামলার ঘটনা না ঘটে। হামাসকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
গত ২৩ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কন বলেছিলেন, ইসরায়েল পুরোপুরিভাবে হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করেছে এবং তাদের নেতৃত্বকে পঙ্গু করে দিয়েছে। সুতরাং এটি তাদের বড় সফলতা। এখন জিম্মিদের ফিরিয়ে এনে যুদ্ধ শেষ করার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে একাধিকবার ব্যর্থ চেষ্টার পর নতুন করে আবারো যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে এটি বাস্তবায়িত হতে পারে।
গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৪ হাজারের বেশি মানুষ তাদের হাত বা পা হারিয়েছেন। এছাড়া ২ হাজারের বেশি মানুষ তাদের মেরুদণ্ডে এবং মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কাজ করা লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইসরায়েলি অনবরত হামলায় গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে; কোনো চিকিৎসা সেবা বা সুবিধা নেই। একমাত্র পুনর্বাসন হাসপাতাল হামাদ হাসপাতাল এবং গাজার প্রস্থেটিকস সেন্টার সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার জাতিসংঘের ত্রাণ ও শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ—এর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গাজার পরিস্থিতিকে ‘প্রতিবন্ধিতার মহামারি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে, আহতদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন সেবার প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে অঙ্গচ্ছেদ ও মেরুদণ্ডের আঘাতের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত।
ইউএনআরডব্লিউএ—এর এই তথ্য গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী সিগ্রিড কাগের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিবেদনে কাগ উল্লেখ করেছিলেন, গাজায় ২২ হাজারের বেশি মানুষ এমনভাবে আহত হয়েছেন যাদের জীবন আর কোনো দিন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৭ হাজার ফিলিস্তিনির অঙ্গ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা কখনোই কোনো উপায়েই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখোমুখি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কর্মকর্তারা এই আক্রমণ এবং ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করার ঘটনাগুলোকে একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর আগে, গত ২১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অপরাধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এ ছাড়া, ইসরায়েল গাজায় তাদের বিধ্বংসী যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct