নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চকে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটমণি জানান, রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের নেতৃত্বাধীন সার্চ-কাম-সিলেকশন কমিটির প্রস্তাবিত প্যানেল থেকে মোট ১১ জনের নাম ছাড়পত্র দিয়েছেন রাজ্যপাল। সেই মতো
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দ মেনে চার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে মঙ্গলবার সম্মতি দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যে চারজন স্থায়ী উপাচার্য হলেন তারা হলেন কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে তপতী চক্রবর্তী, সৌরাংশু মুখোপাধ্যায়, মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে, হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ে নন্দিনী সাহু এবং মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানে আলম।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য ড. জানে আলম বর্ধমানের ভূমিপুত্র। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. জানে আলমের বেড়ে ওঠা বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানা এলাকার আঁখোনার প্রত্যন্ত চেঁচুরি গ্রাম থেকে। জানে আলম যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়েন তখন তিনি পিতাকে হারান। পিতার মৃত্যুর পর মায়ের স্নেহে তিনি বড় হন। মায়ের কাছ থেকে পিতার ইচ্ছার কথা শুনে শৈশবে হারানোর বেদনা দূর করে তিনি উচ্চশিক্ষায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নে বিভোর হন। আঁখোনা হাই স্কুল থেকে পাঠ শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বভারতী থেকে ১৯৮৪ সালে পদার্থবিদ্যায় বিএসএসি অনার্স এবং ১৯৮৭ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় এমএসসিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এর পর তিনি সল্টলেকের ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রোন সেন্টারে প্রয়াত পদ্মভূষণ প্রাপ্ত বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের তত্ত্বাবধানে ‘স্পেস টাইম এভিল্যুশান অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক অফ কোয়ার্ক গ্লুওন প্লাসমা’ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পোস্ট ডক্টরেট করার জন্য তিনি এরপর জাপান পাড়ি দেন।
জাপান সরকারের জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অফ সায়েন্স (জেএসপিএস) ফেলোশিপের অধীনে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেট লাভ করেন।
জানে আলম জার্মানির বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি সল্টলেকের ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রোন সেন্টারের অ্যাটমিক এনার্জি বিভাগে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া. মুম্বাইয়ের পরমাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠান হোমি ভাবা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট (ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়)-এ অধ্যাপনা করেন। এ বছরই তিনি অবসর নেন। তার এই দীর্ঘ শিক্ষকতা ও গবেষণার জীবনে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৫ সালে নয়াদিল্লির ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির আইএনএসএ তরুণ বিজ্ঞানী পুরস্কার পান। ডিএই-এসআরসি আউটস্ট্যান্ডিং রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর অ্যাওয়ার্ড পান ২০০৫ সালে। ২০১০ সালে ভারত সরকারের পরমাণু শক্তি বিভাগের হোমি ভাবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কার পান। মুম্বাইয়ের হোমি ভাবা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের বিশিষ্ট অনুষদ পুরস্কারে ভূষিত হন ২০১৫ সালে। অবশেষে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেও তা দেখে যেতে পারলেন না জানে আলমের মা, অনেক আগেই তিনি মারা যান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct