সারিউল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: দিনটা ছিল ২০১৯ সালের ২৫শে নভেম্বর। মা মহিমা বিবি উনুনের পাশে রান্না করছিল, উঠুনে খেলা করছিল মাত্র ৭ মাস ৮ দিনের শিশু কন্যা সাইরিন খাতুন। সে সময় কাজ থেকে বাড়ি ফিরে আল মামুন হক তার শিশুকন্যাকে তুলে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। মায়ের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে ওই শিশুকে উদ্ধার করে নসিপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় লালবাগ মর্গে। পুকুরের জলে ডুবে মৃত্যু হয় সাত মাসের ফুটফুটে ওই শিশু কন্যার। বছর পাঁচেক আগে ঘটনাটি ঘটে মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার জীবনপুর দাসপাড়া এলাকায়।
সেই ঘটনায় রানিতলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃত শিশুর মা মহিমা বিবি। পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত বাবা আল মামুন হক কে। শুরু হয় ঘটনার তদন্ত। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক গদাধর ঘোষাল তদন্ত শেষ করলেও ৮৭ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা করেন দ্বিতীয় তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক প্রদীপ্ত দাস। পুলিশের এই তৎপরতার প্রশংসা করে আদালত। এই মামলায় সরকারি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন তিনজন। পুলক মুখার্জি, আব্দুল খালেক এবং মোঃ নাসিম শেখ। তারা বলেন, ‘মোট ১৫ জনের সাক্ষী গ্রহণ শেষে ৫ বছর ১১ দিনের মাথায় শুক্রবার আসামি আল মামুন হক কে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। শনিবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগে আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন লালবাগ দ্বিতীয় দ্রুত নিষ্পত্তি আদালতের বিচারক ঋষি কুশারী।’ আসামিপক্ষের আইনজীবী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই রায়ের প্রতিপক্ষে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’ ঘটনা প্রসঙ্গে শিশু কন্যা সাইরিন খাতুনের মা বলেন, ‘মেয়ে গর্ভাবস্থায় থাকতেই আমার স্বামী প্রায়ই বলত কন্যা সন্তান হলে খুন করব। এমনকি কয়েকবার আমার মেয়েকে প্রাণে মারার চেষ্টাও করেছিল। সেদিন হঠাৎ আমার সামনে থেকে আমার মেয়েকে নিয়ে পুকুরে ফেলে দিল। ওর শাস্তি হয়েছে জেনে খুশি হয়েছি। ফাঁসি হলে আরও বেশি খুশি হতাম।’
যদিও রায় ঘোষণার পূর্বে আসামী আল মামুন হক বিচারকের সামনে দাবি করেন তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে তা প্রমাণে ব্যর্থ হন তিনি। ফলে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। এই ঘটনা প্রসঙ্গে সরকারি পক্ষের আইনজীবী নাসিম শেখ বলেন, ‘সমাজ এরকম ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। সাজা ঘোষণার পর এই ধরনের ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করছি।’
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘দেরিতে হলেও বাবার হাতে শিশুকন্যা হত্যার বিচার পেয়েছে ওই শিশু কন্যার মা।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct