আপনজন ডেস্ক: ডিয়েগো গার্সিয়া গোপন সামরিক দ্বীপ,যেখানে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত।সেখানে এক শরণার্থী পরিবারের কঠিন সংগ্রামের গল্প উঠে এসেছে।শান্তি এবং তার পরিবার ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত এই দ্বীপে এসে আটকা পড়ে। তারা একাধারে একটি সংকীর্ণ ক্যাম্পে থাকার জন্য বাধ্য হয়, যেখানে শর্তগুলো ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং তাদের জীবন ছিল এক ঘেয়ে ও বন্দি দশায়। শান্তি তার পরিবারের সঙ্গে ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে আটকে থাকাকালীন তাদের প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের মধ্যে শান্তি ও তার স্বামী সাথে পাঁচ বছর বয়সী ছেলে এবং নয় বছর বয়সী মেয়ে, তিন বছর ধরে এই ক্যাম্পে অবস্থান করেন। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে, তাদের মাছ ধরার নৌকাটি সমুদ্রে দূর্ঘটনায় পড়লে, ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি তাদের উদ্ধার করে ডিয়েগো গার্সিয়ায় নিয়ে আসে। সেখানে তার একটি শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় পায়, যেখানে তারা অন্য শ্রীলঙ্কান তামিলদের সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করে। ক্যাম্পে একেবারে পৃথক ও কঠিন পরিস্থিতিতে থাকা সত্ত্বেও, শান্তি ও তার সন্তানদের জন্য কিছুটা স্বাভাবিক জীবন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম ছয় মাস তারা কোনও শিক্ষা পায়নি, তাই শান্তি নিজেই তাদের ইংরেজি শেখানো শুরু করেন।তিনি কিছুটা আনন্দের জন্য নাচ শেখাতেন এবং বাচ্চাদের সাথে ঘরোয়া খেলাধুলা করতেন। তবে, পুরো পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত কঠিন, যেখানে তারা সীমাবদ্ধ ছিল এবং নিয়মিত নজরদারি চলছিল। শান্তি বলেন, “এটা ছিল একটি খাঁচায় বন্দি জীবন।” ক্যাম্পে তাদের জীবন ছিল একঘেয়ে। খাবারের জন্য সংগ্রাম, স্যানিটেশন সমস্যা, এবং ইঁদুরের উপদ্রবসহ অন্যান্য জীবাণুর কারণে শান্তির পরিবার প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ত। শান্তি জানিয়েছেন যে, “প্রথম দিন থেকে, আমরা ইঁদুরের সঙ্গে বাস করেছি। তারা আমাদের খাবার চুরি করত এবং মাঝে মাঝে আমাদের সন্তানের গা, হাত, পায়ে কামড়াত।” জীবনের এই কঠিন বাস্তবতা সহ্য করার পর, শান্তি ও তার পরিবার একদিন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন পত্র জমা দেয় যাতে তারা নিরাপদ দেশে চলে যেতে পারে। শেষমেশ, তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার পর, ২০২৪ সালে তাদের যুক্তরাজ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শান্তি এবং তার পরিবার যখন যুক্তরাজ্যে পৌঁছায়, তখন তাদের জীবনের এক নতুন সূচনা হয়। তবে তাদের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত, কারণ তারা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct