সজল মজুমদার: বিদ্যালয়কে সাধারণত সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়ে থাকে। সুসংগঠিত ভাবে জ্ঞানার্জন এবং প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য যে শিক্ষা প্রয়োজন তা গ্রহণ করেই পড়ুয়ারা সাধারণত বিদ্যালয় আসে। পাশাপাশি বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় পর্যায়ক্রমিক এবং গঠনগত মূল্যায়নের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। একটি শিক্ষার্থীর সামগ্রিক পারদর্শিতার এবং মেধার মাপকাঠি হল, “ মূল্যায়ন”। এটির মাধ্যমেই পড়ুয়াদের পাঠ বোধগম্যতা, পাঠ নির্যাস, এবং অর্জিত জ্ঞানের ব্যাপ্তি পরিমাপ করা হয়। পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করবার প্রধান মাধ্যম হল পরীক্ষা পদ্ধতি। বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ প্রগতির দিশা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে পড়ুয়ারা বর্তমানে কতটা সিরিয়াস!!! বার্ষিক পরীক্ষা কে ওরা হালকা ভাবে নাকি গভীরভাবে নিচ্ছে সেটা একটা ভাববার বিষয়। শহরাঞ্চলের স্কুলগুলির পড়ুয়াদের লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে পড়াশোনা নিয়ে ওরা মোটামুটি ভাবে ভালো মতোই নিমগ্ন। ওই হালকা একটু আকটু মোবাইলে গুতোগুতি ফাঁকা সময়ে হয়তো ওরা করে থাকে। পরীক্ষার ঠিক আগে অন্তিম প্রস্তুতির যে গুরুদায়িত্ব সেটার সম্যক বোধগম্যতা কিছু পড়ুয়াদের মধ্যে নিজে থেকেই বিদ্যমান থাকে, সেখানে তাদের বাবা-মা পড়াশোনা নিয়ে সামান্যটুকু তত্ত্বাবধান করলেই সংশ্লিষ্ট সেই পড়ুয়া নিজ দায়িত্বে সফলভাবে বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষার ধাপ টপকে এগিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, পরীক্ষার সেই দিনগুলোতে বাবা-মা তাদের আদরের সন্তানকে অনেক সময়ই বলে থাকে, “ওরে রাত জেগে বেশি পড়াশোনা করিস না, সময় মতো শুয়ে পরিস” ।আবার কখনো বলে, “বাবা, ভালোমতো পরীক্ষাগুলো দিস, তোকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন যে” ।কখনো বিরক্ত হয়ে রেগে গিয়ে বলে, “ আহা, এতো মোবাইল ঘাটলে পড়াশোনায় ভালো ফল হবে কি করে!!?” তবে এক্ষেত্রে অনেক পড়ুয়ার বাবা-মার প্রত্যাশা অত্যধিক থাকায় সেই পড়ুয়া কোন কারণবশত প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে বাবা মার কাছে সেই হতাশা অন্য মাত্রায় গিয়ে পৌছায়। সেজন্য সন্তানকে পড়াশোনার জন্য বেশি মানসিক চাপ না দিয়ে তাকে তার পরীক্ষার আগে স্বাভাবিক পড়াশোনা করতে দেওয়াই শ্রেয়। এতে চাপ মুক্ত হয়ে সেই পড়ুয়া পরীক্ষা দিতে পারবে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের পড়ুয়া রা পরীক্ষা নিয়ে এক্কেবারে ততটা সিরিয়াস নয়। গ্রামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চলের পড়ুয়াদের প্রকৃতি, ধরন ধারণের মধ্যে অনেকটাই পার্থক্য চোখে পড়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে প্রতিটি ক্লাসে কতিপয় হাতে গোনা কিছু সংখ্যক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে থাকে। বাকি পড়ুয়ারা শুধুমাত্র স্কুলে নামমাত্র আসা-যাওয়াই করে থাকে। অনেক পড়ুয়া তো আবার ‘ ডুমুরের ফুলের’ মত বহুদিন পরে নিজের বিশেষ কাজে স্কুলে এসে উপস্থিত হয়। আবার উল্টোদিকে বিদ্যালয়ে সাধারণত পড়াশোনা পরীক্ষা ইত্যাদি নিয়ে একটু সিরিয়াস বা একটু ‘এঁচোড়ে পাকা’ বা ‘একটু ডেপো ‘ বা ‘ আতেল গোছের ‘ পড়ুয়া কিন্তু শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা কতটা, সেটা জানার জন্য ,বোঝার জন্য ইচ্ছে করেই নির্দিষ্ট বিষয় সংক্রান্ত নানান প্রশ্ন ক্লাসে করতেই থাকে। এতে বিরক্ত না হয়ে বরং সেই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর গুলো বুঝিয়ে বলতে পারলে তারা খুশিই হয়ে থাকে। তবে অনেক পড়ুয়ার মধ্যেই বেলেল্লাপনা, বাউন্ডুলেপোনা, উশৃংখলতা ইত্যাদি চারিত্রিক বিষয়গুলো লক্ষ্যনীয়। এক্ষেত্রে ছেলেদের সংখ্যাটাই বেশি।এখন খুব কম বয়সে মোটর বাইকের প্রতি ফ্যাসিনেশনটা স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের মধ্যে বর্তমানে অনেকটা চেপে বসেছে। যার ভয়ংকর মাশুল দিতে হচ্ছে অনেক সময় জীবনের বিনিময়ে। যাই হোক, পরীক্ষার দিনগুলো তেও অনেক পড়ুয়া নির্ধারিত সময়ের খানিকটা পরে এসে বিদ্যালয় প্রবেশ করছে। জিজ্ঞেস করলে বলে, “ স্যার,বাড়ি অনেকটা দূরে তো” , বা “ জমিতে কাজ ছিলো একটু” বা “ পরীক্ষার টাইমটা ঠিক মনে ছিলো না” এরকম কিছু একটা। অনেক পড়ুয়া ই পরীক্ষার সময়টুকু সঠিক পড়াশুনা না করে আসার ফলে এর ওর কাছে শুনে উত্তর শুনে নিয়ে কিছু একটা লিখে থাকে। পরীক্ষার সিরিয়াসনেস নিয়ে ওদের ততটা হেলদোল নেই। তবে গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা সামান্যতম সচেতন হলেই তাদের সন্তানরা জীবনের প্রাথমিক শুরুটা দারুন ভাবে কিন্তু করতে পারে।একটা পুরো শিক্ষাবর্ষে শুরুর দিকে যত জন পড়ুয়া ভর্তি হয়,তার খানিকটা শিক্ষাবর্ষের শেষে এসে বিভিন্ন কারণে ড্রপ আউট হয়ে থাকে।পড়াশোনা নিয়ে তাদের মধ্যে একটা অনীহা কাজ করছে।অন্যদিকে,শিক্ষক শিক্ষিকারা কিন্তু সদাযত্নবান। মাঝেমধ্যেই তারা পরীক্ষার সময় পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, “ কিরে,পরীক্ষা কেমন হচ্ছে!? প্রশ্ন ঠিকঠাক হয়েছে তো!!ভালো করে সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখিস” ।আবার কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেক সময় গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো থেকেই অসাধারণ মানের ছাত্র-ছাত্রী রাজ্য এবং দেশের কৃতীদের তালিকায় স্থান অধিকার করছে। মোট কথা, একটি আদর্শ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুষম আদর্শ শিক্ষার বিকাশ তখনই সম্ভব যখন শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি বৌদ্ধিক ও প্রক্ষভিক বিকাশ তার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে ঘটবে, সেক্ষেত্রে সকল পড়ুয়াকে শিক্ষাবর্ষের সমস্ত পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন তথা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অতি অবশ্যই নিজের প্রগতিকে পরখ বা যাচাই করে নিতে হবে বৈকি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct