চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুভাষ চন্দ্র দাশ, বারুইপুর, আপনজন: দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানা এলাকার মহিষমারি এলাকায় চতুর্থ শ্রেণীর নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুন কাণ্ডে নজিরবিহীন রায় দিল বারুইপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (পকসো আদালত)। এদিন অভিযুক্ত মুস্তাকিন সরদারকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন বারুইপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা (পকসো আদালত)এর বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। একইসঙ্গে, নির্যাতিতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৪ অক্টোবর বারুইপুর পুলিশ জেলার জয়নগর থানার মহিষমারি এলাকায় দশ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের পর তাকে খুন করার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে। অভিযুক্ত ১৯ বছরের যুবক মোস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসি দেওয়ার দাবি ওঠে তার এই অপকর্মের জন্য।
সেসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন, দ্রুত ঘটনার তদন্ত এবং বিচার হবে। সেই ঘটনায় ৬১ দিনের মাথায় দোষী সাব্যস্ত হল অভিযুক্ত। সেই সঙ্গে তার ফাঁসির সাজা ঘোষণা হল। যা পশ্চিমবাংলায় বিচারপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিরলতম।
আদালত পর্যবেক্ষণ করে বলে, এই মামলার বিচার খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে যেখানে ৩৬ জন সাক্ষী ছিলেন। এই ঘটনাকে একেবারে বিরলও বলা যাবে না, আবার বিরল নয় সেটাও বলা যাবে না। এধরনের ঘটনা সমাজে ঘটেই চলেছে। বিচারক অভিযুক্তর কাছে তার কোনও বক্তব্য আছে কিনা জানতে চাইলে সে বলে, আমি ছাড়া বাবা মায়ের কেউ নেই। বাবা অসুস্থ। আমি ছাড়া কেউ দেখার নেই। যদি পারেন আমাকে মাফ করবেন। তার আইনজীবীও বলেন, অভিযুক্তর বাবা অসুস্থ। বাড়িতে রোজগারের কেউ নেই। পড়াশুনা শেষ না করে কাজ শুরু করেছে। বয়স কম। ওর বয়স বিবেচনা করে আইনত ওকে শুধরে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হোক কারাগারে। কিন্তু বিচারক তা মানতে চাননি।
গত অক্টোবর মাসে এই ঘটনার তদন্তে ‘সিট’ (বিশেষ তদন্ত দল)গঠিত হয় বারুইপুর পুলিশ জেলার এস.পি পলাশ ঢালির নেতৃত্বে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে পেশ করা হয় তথ্য প্রমাণ সম্বলিত চার্জশিট। মামলায় স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত করা হয় আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়কে। বিচার শুরু হয় ৫ নভেম্বর। মাত্র ২১ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয় বিচারপ্রক্রিয়া। শুক্রবার মামলার রায় দিয়েছেন বারুইপুর জেলা এবং দায়রা আদালতের অধীন ‘পকসো’ ‘কোর্টের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জজ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। অভিযুক্ত মোস্তাকিন সর্দারকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন। এত কম সময়ের মধ্যে এই রায় দেওয়ার ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন। কারণ, প্রায় একই সময়ে আর িজ কর হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি উঠলেও এখনও বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত। যদিও আর জি কর কাণ্ডের ন্যোয় বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা গড়ায়। তারপরও যেভাবে তদন্ত চলছে তাতে কবে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্যাতিতার ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য পুলিশ ও প্রসিকিউশনকে অভিনন্দন জানান। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এ ধরনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও মৃত্যুদণ্ড রাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই অসামান্য সাফল্যের জন্য আমি রাজ্য পুলিশ এবং প্রসিকিউশন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সকলকে অভিনন্দন জানাই।
যদিও নির্যাতিতার বাবা আগেই বলেছিলেন, বিরলতম শাস্তি এই ব্যক্তিকে দেওয়া উচিত। পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে। এখন আমাদের একটাই দাবি, মৃত্যুদণ্ড। তবেই আমার সন্তানের আত্মা শান্তি পাবে। অবশেষে বিচারক সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে আদালতের এমন নজিরবিহীন রায়ে খুশি বারুইপুর পুলিশ জেলা। বারুইপুর পুলিশ জেলার ফেসবুক পেছে ঘটনার বিষয়ে একটি পোস্টও করা হয় ‘জাস্টিস ফর জয়নগর!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct